Popular posts

Wednesday 31 January 2018

সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও বিমানের শ্বাসরুদ্ধকর কিছু ছবি এবং পেছনের কাহিনী


Featured Image

সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ ও বিমানের শ্বাসরুদ্ধকর কিছু ছবি এবং পেছনের কাহিনী




নানা সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কিংবা দুর্ঘটনাবশত অনেক জাহাজ এবং বিমানের সলিল সমাধি হয়েছে সমুদ্রে। সাগরের তলদেশে ঠাঁই হওয়ার পর এসব জাহাজ কিংবা বিমানের ধ্বংসাবশেষ সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে অনেকখানি। সামুদ্রিক নানা পরজীবীর আক্রমণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে ইতিহাসের নানা ঘটনার সাক্ষী এসব ধ্বংসস্তুপ

পানির নিচে ফটোগ্রাফি খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে ধীরে ধীরে এবং এর সাথে সাথে বিভিন্ন সময়ে ডুবে যাওয়া এসব জাহাজ এবং বিমান সম্পর্কে জানার সম্ভাবনাও বেড়ে গেছে। ফটোগ্রাফাররা সাগরে ডুব দিয়ে ক্যামেরায় বন্দী করছেন এসবের ধ্বংসাবশেষ, চিরদিনের মতো হারিয়ে যাওয়ার আগেই। অন্ধকার সমুদ্রগর্ভে এসব ধ্বংসাবশেষের ছবি একধরনের শিহরণ জাগিয়ে তোলে। হতভাগ্য যাত্রীদের এবং ইতিহাসের কোনো একটি অংশের সমাধিস্থল বলা চলে ঐ জায়গাগুলোকে। সেরকমই কিছু ছবি সম্পর্কে বলা হবে। এই তালিকায় আছে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে থেকে ২০-৩০ বছর আগের কোনো দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া জাহাজ কিংবা বিমান।

১. বি-১৭জি ফ্লাইং ক্যাসল (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ)

বি-১৭জি ফ্লাইং ক্যাসলের ধ্বংসাবশেষ; Source: Steve Jones/millionfish.com

১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বি-১৭জি ফ্লাইং ক্যাসল নামক এই বোমারু বিমানটি শত্রুপক্ষের আক্রমণের শিকার হয়। একপর্যায়ে বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং ক্রোয়েশিয়ার ভিস দ্বীপের কাছে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন বিমানটির কো-পাইলট আর্নেস্ট ভিয়েনা। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার স্টিভ জোনস এই ছবিটি তোলেন। এত বছর পরেও প্রায় ৭২ মিটার গভীরে মূল আকৃতি অক্ষুণ্ন রেখে এখনও টিকে আছে। ছবিটি তোলার পর বিমানটির কো-পাইলটের পরিবার কথা বলে স্টিভ জোনসের সাথে এবং জানায় এই প্রথমবারের মতো আর্নেস্ট ভিয়েনার সমাধিস্থল দেখতে পেল তারা।

২. ব্রিটিশ সুপার ড্রেডনট এইচএমএস অডেসিয়াস (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ)

ড্রেডনট এইচএমএস অডেসিয়াসের বিশালাকৃতির বর্ম; Source: Steve Jones/millionfish.com

ব্রিটিশ সুপার ড্রেডনট এইচএমএস অডেসিয়াস ছিলো প্রথম ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হারিয়ে যায়। ঐ সময়ে এই ধরনের যুদ্ধজাহাজগুলো ছিলো সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল। বিশাল আকারের কামান, শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং অসাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সব মিলিয়ে শত্রুশিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করার মতো যা যা দরকার তার সবই ছিলো ওই যুদ্ধজাহাজগুলোতে। কিন্তু ছোট একটা ভুলের কারণে শত্রুপক্ষের মাইনের আঘাতে বিষ্ফোরিত হয় জাহাজটি। ডুবে যাওয়ার আগে জাহাজটিকে যতটুকু সম্ভব আয়ারল্যান্ডে বীচের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ডুবতে থাকায় শেষপর্যন্ত কর্মকর্তারা জাহাজটি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ছবিটিতে যুদ্ধজাহাজটির সিলিন্ডার আকৃতির বিশাল বর্ম দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটিও তুলেছেন স্টিভ জোনস। তিনি বলেন, কয়েক বছরের পর প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ডুবে যাওয়া এসব জাহাজের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না সমুদ্রগর্ভে।

৩. সালেম এক্সপ্রেস (১৯৯১)

লোহিত সাগরে ডুবে যাওয়া সালেম এক্সপ্রেস; Source: Adam Horwood

১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মিশরের সাফাগা থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে যাওয়ার পথে লোহিত সাগরে সালেম এক্সপ্রেস নামক একটি ফেরি ডুবে যায়। লোহিত সাগরের প্রবাল-প্রাচীরের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো ফেরিটি। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৬৯০ জন যাত্রী ছিলো ওই ফেরিটিতে এবং ধারণা করা হয় কমপক্ষে ৪৭০ জনের মতো মারা গিয়েছিলো ওই দুর্ঘটনায়। ২০১০ সালে ফটোগ্রাফার অ্যাডাম হরউড যখন ছবি তোলার জন্য প্রায় ৬০-৭০ মিটার নিচে ফেরিটির কাছে পৌঁছান, তখন তিনি যাত্রীদের ব্যবহার্য অনেক জিনিসপত্র দেখতে পান। সেখানে গিয়ে এক আশ্চর্য বিষাদে ভরে ওঠে মন। তার ভাষ্যমতে, সময় যেন সেখানে স্থির হয়ে আছে।

৪. গিয়ানিস ডি (১৯৮৩)

ডুবে যাওয়া গিয়ানিস ডি জাহাজের ভিতর থেকে তোলা হয়েছে ছবিটি; Source: Anders Nyberg

গিয়ানিস ডি হচ্ছে একটি জাপানে তৈরী কার্গো জাহাজ। ১৯৮৩ সালের এপ্রিলে জাহাজটি যুগোস্লাভিয়ার রিজেকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো। সুয়েজ খাল হয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাওয়ার কথা ছিলো জাহাজটির। সুয়েজ খাল পার হয়ে জাহাজটি যখন লোহিত সাগরে এসে পড়লো তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন জুনিয়র এক অফিসারকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে কেবিনে গেলেন একটু বিশ্রাম নিতে। কিছুক্ষণ পর  তিনি বুঝতে পারলেন জাহাজটির সাথে কিছু একটার ধাক্কা লেগেছে। কেবিনের বাইরে বের হয়ে দেখলেন গতিপথ পাল্টে গিয়ে জাহাজটি সাদ আবু নুহাস প্রবাল-প্রাচীরের উপর দিয়ে পূর্ণ গতিতে চলছে! প্রবাল-প্রাচীরের ধাক্কায় এরপরই কার্গো জাহাজটি ডুবতে শুরু করে। যদিও এই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। প্রায় ২৪ মিটার গভীরে থাকা এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের জন্য এখন একটি আকর্ষণীয় জায়গা। ছবিটির ফটোগ্রাফার অ্যান্ডার্স নাইবার্গ যেকোনো খুটিনাটি বিষয় ক্যামেরাবন্দী করতে পছন্দ করেন আলোর কারসাজির মাধ্যমে। এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, জাহাজের বাইরে থেকে আলো জানালাগুলো দিয়ে ভিতরে আসছে যা পানির নীচের অন্ধকারকে দূর করে ছবিটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

৫. এসএস হর্নস্টেইন (১৯০৫)

এসএস হর্নস্টেইন; Source: Anders Nyberg

এসএস হর্নস্টেইন ছিলো একটি জার্মান কার্গো স্টিমার। এটি বাল্টিক সাগরে যাতায়াত করতো। ১৯০৫ সালের ১৬ নভেম্বর সালভো প্রাচীরের কাছে প্রবালের ধাক্কায় ডুবে যায় এই কার্গো স্টীমারটি। ডুবে থাকা স্টিমারটির ধ্বংসাবশেষের এই ছবিটিও তোলেন অ্যান্ডার্স নাইবার্গ। তার মতে, সাগরের নিচে এ ধরনের ছবির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ধ্বংসাবশেষের গায়ে জমে থাকা শ্যাওলা, প্রবাল, রং-বেরংয়ের নানা সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি। ছবি তোলার সময় হঠাৎ তার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিলো একধরনের উজ্জ্বল নীল আলো এবং পরে দেখা গেলো এই আলো আসছে এক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের চোখ থেকে, যা তাদেরকে শিকারকে কাবু করতে সহায়তা করে। সমুদ্রতলের ফটোগ্রাফিতে এগুলো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

৬. ট্রাক লেগুন দ্বীপের কাছে জাহাজ এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষ

নিকটতম দেশ থেকেও হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে চুক লেগুন নামক দ্বীপে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক অনন্য নিদর্শন। পূর্বে এই দ্বীপটির নাম ছিল ট্রাক লেগুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্রাক লেগুনে ছিল জাপানের প্রধান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি, যেখান থেকে সবরকম অপারেশন পরিচালনা করা হতো। যুদ্ধের একপর্যায়ে আমেরিকা যখন প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো দখল করে নিয়ে ঘাঁটি স্থাপন করা শুরু করলো, তখন জাপানের আধিপত্য ক্রমেই কমে আসতে লাগলো। এই সুযোগে আমেরিকা আক্রমণ করলো জাপানের ট্রাক লেগুন ঘাঁটিতে, যা পরিচিত অপারেশন হেইলস্টোন নামে। ১৯৪৪ সালের ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি এই দুদিন ধরে চলে জাপানের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই অপারেশন। জলপথ এবং আকাশপথ উভয়দিক দিয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৬০টির মতো জাপানী জাহাজ এবং কমপক্ষে ২৫০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে আমেরিকান বাহিনী।

এভাবেই ছড়িয়ে আছে যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষে; Souce: NIck Blake/Barcraft Media

ট্রাক লেগুন দ্বীপটির আশেপাশে ছড়িয়ে আছে এসব জাহাজ এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষ। সমুদ্রের নিচে এটাই জাহাজ এবং বিমানের সবচেয়ে বড় সমাধিস্থল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দলিলের একটি। অনেক বোমা থাকার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত ডুবুরীরা এই জায়গাটিতে যাওয়ার সাহস পেত না। তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে পর্যটক, ডুবুরী এবং ফটোগ্রাফারদের কাছে ট্রাক বা চুক আইল্যান্ডে খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান।

গোসেই মারু নামক একটি জাহাজের অভ্যন্তরভাগ দেখছেন একজন ডুবুরী; Souce: NIck Blake/Barcraft Media

ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এখনো পাওয়া যায় নিহত জাপানী সৈন্যদের মাথার খুলি কিংবা অন্যান্য হাড়গোড়। অনেক ডুবুরীকে সেগুলো তুলে নিয়ে আসতেও শোনা যায়!

জাহাজের অভ্যন্তরে নিহত জাপানী সৈন্যদের মাথার খুলি (১৯৮০-১৯৯০); Source: Amos Nachoum/Corbis

ডুবে যাওয়া কোনো একটি জাহাজের বাথরুম; Source: Design Pics Inc / Rex Features

পুরো জায়গা জুড়ে রয়েছে এরকম আরও যুদ্ধজাহাজ; Source: Alamy

ডুবে যাওয়া একটি সাবমেরিনের ভিতরে একজন ডুবুরী; Souce: NIck Blake/Barcraft Media

ফিচার ইমেজ © Dive Photo Guide

Saturday 13 January 2018

সাইনোসেফালি: ইতিহাসের রহস্যময় কুকুরমুখো মানুষেরা

অদ্ভুত রহস্যময় আমাদের এই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে নানা রহস্যময় জিনিস, যার কোনোটির রহস্য হয়তো মানুষ জানতে পেরেছে আবার কোনোটির পারেনি। বহুকাল ধরেই মানব ইতিহাসে বহু রহস্যময় প্রাণীর খবর পাওয়া গেছে। যেমন- ড্রাগন, বিগফুট, ইয়েতি, ওয়্যারউলফ ইত্যাদি। এসব প্রাণীর বেশির ভাগই কাল্পনিক। তবে ইতিহাসের বহু গল্প, উপকথা কিংবা ভ্রমণকাহিনীতে এমন কিছু রহস্যময় প্রাণীর কথা উল্লেখ রয়েছে যাদেরকে শুধু কাল্পনিক বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

সাইনোসেফালি শুধু গল্প কিংবা কল্পনা নয়; Source: getwallpapers.com

এদের সম্পর্কে ইতিহাসে রয়েছে নানা প্রমাণ, নানা দলিল। বিখ্যাত বহু পর্যটকও যাদের কথা উল্লেখ করছেন। তেমনই এক প্রাচীন রহস্যময় প্রাণী জাতি হলো ‘সাইনোসেফালি’ বা কুকুরমুখো মানুষ। কুকুর বা শেয়ালের মতো মাথাওয়ালা মানুষ হিসেবেও এরা পরিচিত। বহুকাল আগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ ছিল এই রহস্যময় কুকুরমুখো মানবদের। চলুন আজকে জেনে নিই এই রহস্যময় সাইনোসেফালি সম্পর্কে।

কারা এই সাইনোসেফালি?

সাইনোসেফালি (Cynocephali) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘cyno’, যার অর্থ কুকুর এবং ‘cephaly’, যার অর্থ একধরনের মাথার অসুখ, এই দুটি গ্রীক শব্দ থেকে। সাইনোসেফালি দ্বারা এমন এক রহস্যময় মানব গোষ্ঠীকে বোঝানো হয় যাদের মাথা কুকুর কিংবা শেয়ালের মতো। তারা মানুষের ভাষা বুঝতে পারতো তবে কথা বলতে পারতো না। যদিও ইতিহাসের কিছু কিছু জায়গায় এদের সভ্য মানুষের মতো সামাজিক ভাবে বসবাস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বেশীরভাগ ইতিহাসবিদের মতে তারা ছিল বর্বর পশুদের মতো, যারা প্রধানত শিকার করে জীবনধারণ করতো।

একটি সাইনোসেফালাস; Source: wikimedia.org

এটুকু শুনেই আপনার হয়তো মনে হচ্ছে ড্রাগন, ওয়্যারউলফের মতো এটিও কোনো এক কাল্পনিক গালগল্প! কিন্তু না, সাইনোসেফালিদের অস্তিত্ব বিশ্বাস করার মতো বহু কারণ ইতিহাসবিদদের কাছে রয়েছে। বহু বিখ্যাত পর্যটক ও অভিযাত্রী, যেমন ক্রিস্টোফার কলোম্বাস, মার্কো পোলো এই সাইনোসেফালির বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়াও প্রাচীন মিসর, গ্রীস, মধ্যযুগীয় ইউরোপ ও আফ্রিকার মতো বহু প্রাচীন সভ্যতায় এবং খ্রিস্টীয় পুরানে এদের কথা উল্লেখ রয়েছে।

ইতিহাসে সাইনোসেফালি

খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে বিখ্যাত গ্রীক ডাক্তার সিটেসিয়াস সাইনোসেফালিদের বিশদ বিবরণ সহ চমৎকার একটি প্রতিবেদন লেখেন। তৎকালীন ভারতের পাহাড়ে দেখতে পাওয়া সাইনোসেফালি সম্পর্কে তিনি তার লেখায় বর্ণনা দেন। সে সময় ভারত ‘ইন্ডিকা’ নামে পরিচিত ছিল। তার লেখায় তিনি এক ধরণের মানব উপজাতির কথা বলেন যাদের মাথা ছিল কুকুরের মতো। তারা কুকুরের মতো ‘ঘেউ ঘেউ’ করে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতো। তবে এরা মানুষের কথা ঠিকই বুঝতে পারতো। এদের প্রধান খাবার ছিল মাংস। এদের দাঁত ছিল কুকুরের মতো, তবে কিছুটা লম্বা। নখগুলো ছিল লম্বা ও বাঁকানো।

ফলের বিনিময়ে অন্যান্য দ্রব্য কিনতো সাইনোসেফালিরা; Source: mysteriousuniverse.org

বিভিন্ন সূত্র থেকে তিনি জেনেছিলেন, এরা মূলত শিকার করে জীবনধারণ করতো। শিকার ধরার পর তা মেরে রোদে ঝলসিয়ে খেতো তারা। এরা ভেড়া ও ছাগল পালন করতো। এছাড়া তৎকালীন ভারতে জন্মানো ‘সিপ্তাখোরা’ নামের একটি ফল ছিল এদের খুব প্রিয়। এরা এই ফলের চাষ করতো এবং উৎপাদিত ফলের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে রুটি, ময়দা, সুতা সহ তরবারি, ঢাল, তীর, ধনুক প্রভৃতি জিনিস কিনতো। সিটেসিয়াস তার লেখায় আরো জানান,

“তারা বাড়িতে নয় বরং গুহায় বাস করতো। তীর-ধনুক নিয়ে শিকারকে তাড়া করতো। এরা ছিল খুব দ্রুত গতিসম্পন্ন। খুব দ্রুতই এরা এদের শিকারকে ধরে ফেলতে পারতো। এদের মধ্যে নারীরা মাসে একবার গোসল করতো, তবে পুরুষেরা কখনো গোসল করতো না। এরা চমৎকার চামড়ার তৈরি পোশাক পরতো। এদের মধ্যে যারা ধনী ছিল তারা কেউ কেউ লিলেনের পোশাকও পরতো। ঘুমানোর জন্য এদের কোনো বিছানা ছিল না। এরা ঘাসের উপরে ঘুমাতো। যার সবচেয়ে বেশি ভেড়া থাকতো তাকেই সবচেয়ে ধনী হিসাবে ধরা হতো। নারী পুরুষ উভয়েরই পেছনের দিকে কুকুরের মতো লম্বা লেজ ছিল। তবে এই লেজ কুকুরের লেজের চেয়ে বেশি লম্বা ও লোমশ হতো। স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে এদের আয়ু ছিল অনেক বেশি। গড়ে ১৭০-২০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতো এরা।”


তৎকালে ভারত ছিল সাইনোসেফালিদের প্রধান বাসস্থান। গ্রীক অভিযাত্রী ‘মেগাস্থিনিস’ও ভারতে কুকুরের মতো মাথাযুক্ত এক ধরনের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ লাভের কথা উল্লেখ করেন। দার্শনিক ‘ক্লাউডিয়াস অ্যালিয়েনাস’ তার লেখায় ভারতের এই কুকুরমুখো মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যারা রোদে শুকানো মাংস খেয়ে বেঁচে থাকতো এবং ছাগল ও ভেড়া পালন করতো। এছাড়াও আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তার গুরু অ্যারিস্টটলকে লেখা কয়েকটি চিঠিতে দাবি করেন যে,  তিনি খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে যখন ভারত আক্রমণ করেছিলেন তখন এমন অনেক কুকুরের মতো মাথা যুক্ত মানুষ দেখেছিলেন।

যুদ্ধে অংশ নিত সাইনোসেফালিরা; Source: wikimedia.org

তিনি আরো বলেন, যুদ্ধে অংশ নেয়া এমন মাথাযুক্ত কয়েকটি মানুষকে তিনি আটকও করেছিলেন, যারা রেগে গিয়ে কুকুরের মতো ‘ঘেউ ঘেউ’ শব্দ করতো। গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসও তার লেখায় এদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

“লিবিয়ার উত্তরদিকে নিচু বেলেমাটির স্থানে যেখানে মেষপালকদের বাস, সেখান থেকে পশ্চিমে ট্রাইটন নদী পর্যন্ত পাহাড়ি জঙ্গলে নানা পশু বাস করে। এখানে কুকুরের মতো চেহারার মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। লিবিয়ার অধিবাসীদের মতে, এদের চোখ দুটি বুকে অবস্থিত।”


এমনই বহু শতাব্দী ধরে বহু বীর যোদ্ধা, বহু মিশনারি, বহু অভিযাত্রীর বর্ণনায় উঠে এসেছে এই সাইনোসেফালির কথা। পরবর্তী সময়ে রোমান লেখক, পরিবেশবিদ ও দার্শনিক প্লিনি দ্য এল্ডার তার ‘ন্যাচারাল হিস্টোরি’ বইতেও এদের কথা লিখেছিলেন। তিনি এদেরকে রহস্যময় এক মানব সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এদের ‘দ্য মনস্ট্রোয়াস রেস’ নামে আখ্যা দেন।

সেইন্ট ক্রিস্টোফার; Source: wikimedia.org

সাইনোসেফালির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মের সেইন্ট ক্রিস্টোফার। বহু লেখায় উল্লেখিত বর্ণনা অনুসার, ক্রিস্টোফারের দেহ ছিল মানুষের মতো, কিন্তু মাথা কুকুরের মতো, অর্থাৎ তিনিও ছিলেন সাইনোসেফালির একজন। শুধু তা-ই নয়, এই ধর্মীয় ব্যক্তি পূর্বে ছিলেন একজন বন্য ও দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, যিনি ‘সাইরেনাইকার’ যুদ্ধে বন্দি হন। বর্ণনা মতে, তিনি ছিলেন কুকুরের মতো মাথাবিশিষ্ট বিশালদেহী এক মানুষ এবং সাইনোসেফালির একটি যোদ্ধা গোত্রে তার জন্ম হয়েছিল। খ্রিস্টীয় পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ক্রিস্টোফার যিশু খ্রিস্টের সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং পরবর্তীতে পূর্বের পাপকাজ পরিত্যাগ করে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেন। বহু ঐতিহাসিক চিত্রকর্মে কুকুরমুখী এই সন্ন্যাসীর ছবি রয়েছে।

বিভিন্ন পর্যটকের বর্ণনার সাইনোসেফালি; Source: mysteriousuniverse.org

এসব তো গেলো প্রাচীন যুগের কথা। পরবর্তী যুগে ইতালিয়ান সন্ন্যাসী ‘ওডোরিক ওফ পর্ডেনান’, ফ্রেঞ্চ কার্ডিনাল ‘পিয়ের ডি অ্যালিয়ে’, পর্যটক ‘জিওভানি ডা পিয়ান ডেল কার্পাইন’ সহ বহু বিখ্যাত অভিযাত্রী ও পর্যটকেরাও বর্ণনা করেছেন এই সাইনোসেফালির কথা। বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো তার লেখায় ‘আনগামানিয়ান’ দ্বীপ ভ্রমণের সময় সাইনোসেফালি সম্পর্কে লিখেছেন,

“আনগামানিয়ান একটি বিশাল দ্বীপ। এই দ্বীপের অধিবাসীরা মূর্তিপূজারী। এদের কোনো রাজা নেই। বন্য পশুর থেকে কোনো অংশেই কম নয় এরা। আমি আপনাদের নিশ্চিতভাবে বলছি, এই দ্বীপের সব অধিবাসীই মাথা, দাঁত ও চোখ কুকুরের মতো। বলা যায় চেহারার দিক দিয়ে এরা বড় আকারের কুকুর। এদের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। তবে এরাই সবার চেয়ে বেশি হিংস্র। নিজের মতো ছাড়া অন্য আর যা কিছু এদের সামনে আসুক না কেন এরা তা ধরে খেয়ে ফেলে।”


শুধু মার্কো পোলোই নয়, বিখ্যাত অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসও এই সাইনোসেফালির কথা উল্লেখ করছেন। তিনি এক অভিযানে হাইতি, যা তৎকালীন সময়ে বোহিও নামে পরিচিত ছিল সেখানে গিয়ে এমন কুকুরের মতো মাথা যুক্ত মানুষ দেখতে পান। রানী ইসাবেলাকে লেখা চিঠিতে তিনি এদের কথা উল্লেখ করেন।

ইতিহাসের বহু স্থানে স্থান পাওয়া এই সাইনোসেফালির দেখা মিলেছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাতেও। মিশরীয়দের ‘হাপি’ ও ‘আনুবিস’ নামের দুজন দেবতাও ছিল এমন কুকুরের মতো মাথা বিশিষ্ট মানুষ অর্থাৎ সাইনোসেফালি।

মিশরীয় দেবতা আনুবিসের মূর্তি; Source: wikimedia.org

ইতিহাসের এত বেশি স্থানে এবং এত বিখ্যাত সব ব্যক্তির বর্ণনায় এদের উল্লখে রয়েছে যে, এদের অস্তিত্ব চাইলেই গবেষকরা অস্বীকার করতে পারেন না। তবে এই ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী জাতির কী হয়েছিল তা আজও কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারে না। ধারণা করা হয়, আশেপাশের সাম্রাজ্যগুলোর বিস্তারের সাথে সাথে এদেরকে হত্যা করা হয়। এরা এমনই এক যোদ্ধা জাতি ছিল যারা অন্যের শাসন, পরাধীনতা কিংবা অন্যের আচার আচরণ মেনে চলার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাকেই বেশি সম্মানের মনে করতো। ফলে হয়তো বিভিন্ন শক্তিশালী ও বড় জাতির হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল এদের। তবে যা-ই হোক না কেন, মানুষের দৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ রূপে আড়াল হয়ে গেছে এই সাইনোসেফালিরা। হয়তো সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এরা। কিংবা কে জানে, হয়তো আজও এদের কেউ কেউ বেঁচে আছে, লুকিয়ে আছে কোনো দুর্গম গুহায় লোকচক্ষুর আড়ালে!

ফিচার ইমেজ – tattoo.ru

ইতিহাসের সবচেয়ে বিচিত্র দশটি মৃত্যু

আজ হোক বা কাল, প্রতিটা মানুষকেই একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর পর একজন মানুষ স্মরনীয় হয়ে থাকে তার জীবদ্দশায় সাধিত কর্মের দ্বারা। যদিও কিছু মানুষ ব্যতিক্রম, যারা কর্মের জন্য নয় বরং তাদের মৃত্যুর কারনের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। ইতিহাসের এমনই ১০ টি বিচিত্র মৃত্যুর বর্ণনা তুলে ধরছিঃ

 

১. অ্যাসকাইলাস – প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন। তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরন করা হয় তার লেখা ট্রাজেডিগুলোর জন্য। অথচ তার মৃত্যুকে বিয়োগাত্মক নয়, বরং হাস্যরসাত্মকভাবে লোকমুখে শোনা যায়। অ্যাসকাইলাসের পর খুব অল্প সময় বেঁচে থাকা এক রোমান লেখকের ভাষ্যমতে, গ্রীসের এই ট্রাজেডিয়ানের মৃত্যু হয়েছিল আকাশ থেকে পতিত হওয়া এক কচ্ছপের দ্বারা ! 
আপনি হয়ত ভাবছেন যে এটা কিভাবে সম্ভব!  ঠিক আছে, গল্পটা শেষ হওয়া পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন। আসলে অ্যাসকাইলাইসের মাথাকে পাথর মনে করে এক ঈগল ভুল করে উপর থেকে এক কচ্ছপ ছুঁড়ে ফেলেছিল। ভেবেছিল শক্ত পাথরের আঘাতে তার শিকারের খোলসটা ভেংগে যাবে। কিন্তু হায়, ওটা পাথর নয় বরং অ্যাসকাইলাসের শক্ত মাথা ছিল! সাধারনত ঈগল পাখীরা তাদের শিকার করা কচ্ছপদেরকে পাথরের উপরই নিক্ষেপ করে থাকে। আর অ্যাসকাইলাসের মৃত্যুর এ গল্পটা প্রকৃতপক্ষে কোন মিথ্যা গল্প নয়।

Death of Aeschylus. Credit: Gabworthy

 

২. কীন্ শী হোয়াং – তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার নাম চাইনিজরা সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। কারন তিনি ছিলেন চীনের প্রথম রাজা এবং ঐ সময়ের সবচেয়ে সফল শাসক। কে ক্ষমতাধর হতে না চায়? কীন্ শী হোয়াংও চিরস্থায়ীভাবে চীনের ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগা শী হোয়াংকে কেউ একজন বলেছিল, যদি সে প্রানঘাতী পারদের বিষ পান করে তবে অমরত্ব লাভ করতে স্বক্ষম হবে!  কিন্তু আফসোস! পৃথিবীতে চীরস্থায়ী হওয়ার ইচ্ছে তার পূরন হয়নি বরং চাইনিজদের জীবন থেকে চিরদিনের জন্য তিনি বিদায় নিয়েছিলেন !

Qin Shi Huang.

৩. হাঙ্গেরীর রাজা ১ম বেলা – হাঙ্গেরীর রাজা প্রথম বেলা, হাঙ্গেরী থেকে পৌত্তলিকতার উচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন। আর এ কারনে তিনি এখনো হাঙ্গেরীতে সুপরিচিত। যাহোক, শুধু যুদ্ধবাজ পৌত্তলিকদের উচ্ছেদ ঘটনাই তার প্রতি আগ্রহের একমাত্র কারন নয়। রাজা বেলার মৃত্যুর কারনটা এমনই অদ্ভুত ছিল যে হাঙ্গেরীয়ানদের কাছে এটা দৈবাত ঘটনার মত, এমনকি অবিশ্বাস্য বললেও কম হয়ে যাবে। কারন বিলাসবহুল কোন সিংহাসন হঠাৎ ভেংগে কোন রাজার মৃত্যু ঘটনা অবিশ্বাস্যই বটে! রাজা বেলা ভাঙ্গা সিংহাসন সমেত পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই বিলাসবহুল সিংহাসনের হঠাৎ ভাঙ্গনই তা্র মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়!

Béla I of Hungary. Credit: Wonderlists

 

৪. জর্জ প্লেন্টাগেনেট – এবার একটু ভিন্ন ঘটনা। অন্যান্য মৃত্যগুলোকে দূর্ঘটনা বলা যেতে পারে, কিন্তু জর্জ প্লানটাগেনেট নিজেই নিজের জন্য এক বিচিত্র মৃত্যুভাগ্য নির্ধারন করেছিলেন। “War of the roses” এ পরাজয়ের পর  তার ভাই চতুর্থ এডওয়ার্ড এর আদেশে তাকে বন্দী করা হয়, হত্যা করা হবে তাকে। কিন্তু ভ্রাতৃপ্রেম বলে একটা কথা আছে। এডওয়ার্ড তার ভাইকে নিজের মৃত্যুর প্রক্রিয়া নিজেকেই বাছাই করতে বললেন। এরপর জর্জ এমন এক সৃজনশীলতার পরিচয় দিলেন যার কারনে মানুষ তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরন করে আসছে। শিরশ্ছেদনের কথা না বলে জর্জ প্লান্টাগেনেট ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তাকে যেন মদভর্তি পিপেতে ডুবিয়ে মারা হয় ! তার প্রিয় মদ, মালভাসিয়াতে ডুবিয়ে !

George Plantagenets death. Credit: weiwenku

 

৫. হান্স স্টেইনিনজার – স্টেইনিনজার ছিলেন একজন পৌরপ্রধান, মানে বর্তমান অস্ট্রিয়ার মেয়র। তিনি তার শহরে জনগনের জন্য কি পরিমান কাজ করেছিলেন তা সবাই ভুলে গিয়েছে, কিন্তু তিনি কিভাবে মৃত্যুবরন করেছিলেন তা আজো কেউ ভুলতে পারেনি। হোঁচট খেয়ে পড়ে যেয়ে হান্সের ঘাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। আশ্চর্যজনক ব্যপার হল তিনি তার নিজের দাঁড়িতেই হোঁচট খেয়েছিলেন! আর প্রানঘাতী তার সে দাঁড়ি ছিল ৪.৫ ফুট বা ১.৪ মিটার লম্বা!

Hans Steininger. Credit: TKM

 

৬. Dancing Plague – আমরা বর্তমান সুশৃঙ্খল অস্ট্রিয়াকে দেখছি, কিন্তু যদি ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে ফিরে তাকাই তবে এক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি দেখতে পাবো। ১৫১৮ সালের নৃত্য মহামারী কি দুর্ভোগ ডেকে এনেছিল তা কেউ জানেনা। অথচ এর কবলে পরে ৪০০ এরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। অল্প সময়ের বিশ্রামে এরা পুরো মাসব্যাপী নাচত। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নাচ কারো জন্যই ভালো নয় এবং প্রায় ৩০ জনের মত লোকের ক্ষেত্রে এটা খুব বাজেভাবে পরিলক্ষিত হয়। যাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছিল স্ট্রোক করে, কেউ হার্ট এটাকে আবার কেউ অবসাদের কারনে!

Dancing Plague. Credit: Viral Track

 

৭. Clement Vallandigham –  ক্লিমেন্ট হলেন উনিশ শতকের এমন একজন উকিল, কোন মামলা হাতে নেওয়ার পর যেকোন মূল্যে মক্কেলদেরকে নির্দোষ প্রমান করাই ছিল যার একমাত্র লক্ষ্য। দুর্ঘটনাক্রমে একবার তিনি তার সীমা অতিক্রম করে ফেললেন, যার মূল্য তাকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিল। বন্দুক নিয়ে টানা হেঁচড়ার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কিভাবে নিজেকেই মেরে ফেলেছিল তা বর্ননা করতে
গিয়ে উকিল সাহেব নিজেও একই কাজ করলেন! একেবারে একই রকম – তিনি নিজের মাথায় গুলি করলেন! কিন্তু অতি খারাপের মধ্যেও ভালো কিছু সম্ভাবনা থাকে! আদালত শেষপর্যন্ত তার মক্কেলকে নির্দোষ বলে মেনে নিল!

Clement Vallandigham. Credit: gzt

 

৮. দি গ্রেট মলাসেস ফ্লাড – ১৯১৯ সালে বোস্টনে চিটাগুড় দুর্ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে হঠাত পিউরিটি ডিস্টিলিং কোম্পানির ঢালাই লোহার বিশাল ট্যাঙ্কের বিস্ফোরন ঘটে। সেইসাথে দোতলা সমান উঁচু প্রায় ৩৫ কি.মি./ঘন্টা বেগে উত্তপ্ত চিটাগুড়ের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে শহরের প্রধান সড়ক আর তার আশেপাশের গলিগুলোতে। ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের ট্রাজেডিতে পরিনত হল পথচারী আর ঘোড়াটানা ওয়াগনগুলো। চিটাগুড়ের এই স্রোত হত্যা করল ২১ জন জলজ্যান্ত মানুষকে আর আহত করল ১৫০ জনকে। এই ট্রাজেডি বিভিন্ন আঞ্চলিক লোককাহিনী, গান আর গল্পেও বর্ণিত আছে।

The Great Molasses Flood. Credit: The Boston Globe

 

৯. রবার্ট উইলিয়ামস – এসেম্বলি লাইনের সাথে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় ফোর্ড মোটর কোম্পানি। এই কোম্পানিটি অটোমোবাইল উৎপাদনের অগ্রদূত হিসেবেও  ইতিহাসে স্হান দখল করে নিয়েছিল। ফোর্ড এরপরের  ইতিহাস গড়ে ১৯৭৯ সালে কোম্পানির এক কর্মচারীর মৃত্যুর মাধ্যমে! ইতিহাসের পাতায় ফোর্ডই প্রথম কোম্পানি যেখানে এক রোবটের দ্বারা কোন মানুষের হত্যাকান্ড ঘটেছিল! এক টন ওজনের একটি রোবটের বাহুর আঘাতে ১৯৭৯ সালে রবার্ট উইলিয়ামস নামের ওই কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেন।

Robert Williams death by robot. Credit: CVLT Nation

১০. V. kamaraj – ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বলে, ভূপতিত উল্কা সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার অনুপাত হল ১:১৬০০০০০। কামারাজ হলেন সেই হতভাগ্য একজন ব্যক্তি। ২০১৬ সালের ঘটনা, এই ইন্ডিয়ান বাস ড্রাইভারই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার মৃত্যু হয়েছিল একটা উল্কাপিন্ডের আঘাতে। বাস চালানোর সময় হঠাত আকাশ থেকে একটা পাথর বাসের উপর তীব্র গতিতে ছিটকে পড়ে। প্রচন্ড আঘাতে মারা যান কামারাজ, আহত হন আরো তিন জন ব্যক্তি। অবশ্য এ ঘটনায় নিহত আরো অনেকে থাকলেও কামারাজের মৃত্যুটাই রেকর্ড করা হয়েছে।

V. Kamaraj death. Credit: Deccan Chronicle

Saturday 6 January 2018

ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার কয়েকটি ঘরোয়া কার্যকরী উপায়..

লিঙ্গভেদে নয়, বিশ্বের সকলের কম বেশি চুলের নানা সমস্যায় ভোগেন। আপনার যদি দৈনিক ১০০ টি চুল পড়ে তবে চিন্তার তেমন কারণ নেই কিন্তু সচেতন থাকা ভালো।বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। যেমন – খনিজের অভাব, দুঃশ্চিন্তা, জিনের সমস্যা, বিভিন্ন ঔষধ সেবন, দূষণের শিকার ও খাদ্যাভাস। চুল পড়া বন্ধের ঔষধ কোনভাবেই চুল পড়া বন্ধের উপায় হতে  পারে না।

১) চুল পড়া কমাতে বা চুলের যেকোনো সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমেই চুল পরিষ্কার করতে হবে আর তার জন্য প্রতিদিন হালকা ধরণের শ্যাম্পু ব্যবহার করা খুব ভালো। চুল পরিষ্কার রাখলে চুলের সৌন্দর্যে আপনার সৌন্দর্য আরো অনেকগুন বেড়ে যাবে।


২) ভিটামিন শুধুমাত্র আমাদের শরীরের জন্যই ভালো না আমাদের চুলের জন্যও ভালো। বিশেষ করে ভিটামিন এ সেবাম তৈরি করে স্কাল্পের সুস্থতা বজায় রাখে। ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে যার ফলে নতুন চুল উঠে। 

৩) মাছ, মাংস, সয়া এবং অন্যান্য যেকোনো আমিষ আপনার চুলের জন্য খুব ভালো। এগুলো আপনার চুল পড়া কমাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৪) যারা চুল পড়া ও চুলের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে চিন্তিত তারা কয়েক মিনিটের জন্য সপ্তাহে ২ – ৩ বার মাথায় ভালো মানের কোনো তেল ম্যাসাজ করুন। নতুন চুল গজানোর উপায়ঃচুল ঘন করার উপায় হচ্চে ক্যাস্টর অয়েল।


৫) চুল পড়া রোধে পেয়াজ, আদা ও রসুনের রসের যেকোনো একটি সারারাত লাগিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে। এটি যদি আপনি প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার করেন তবে চুলের নানাবিধ সমস্যায় আপনি খুব ভালো ফলাফল দেখতে পাবেন।

৬) আমাদের প্রতিটি চুলের গোড়ায় প্রায় এক – চতুর্থাংশ জল রয়েছে। তাই আপনার চুলের সুস্থতা ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে প্রতিদিন প্রায় ৪ – ৮ গ্লাস জল পান করুন।


৭) অ্যালকোহল আপনার চুলের বৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটায়। চুলের সুস্থতা বজায় রাখতে হলে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। আর সিগারেট আপনার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা দেয় যার ফলে চুলের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।

৮) পুরুষদের বেশিরভাগই মানসিক চাপ বা দুঃশ্চিন্তা থেকেই চুল পড়ে। তাই এগুলো কমাতে হবে। 

৯) চুলে যেকোনো ধরণের রাসায়নিক পদার্থ বা বিভিন্ন চুলের রঙ ব্যবহার আপনার চুলের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

 

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন..