Popular posts

Monday 31 October 2016

The history of Homophythi

ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. হ্যানিম্যান রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষের মর্মান্তিক বেদনাকে যিনি নিজের হৃদয় দিয়ে সবচেয়ে বেশী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তাঁর নাম স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানসমূহের ইতিহাস নিয়ে যারা ব্যাপক পড়াশুনা করেছেন, তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, তিনি ছিঁলেন পৃথিবীতে আজ পযর্ন্ত জন্ম নেওয়া সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কেবল একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীই ছিলেন না; একই সাথে তিনি ছিলেন মানব দরদী একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ, একজন মহাপুরুষ, একজন শ্রেষ্ট কেমিষ্ট, একজন পরমাণু বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসক, একজন অণুজীব বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট ফার্মাসিষ্ট, একজন সংস্কারক, একজন বহুভাষাবিদ, একজন দুঃসাহসী সংগঠক, একজন অসাধারণ অনুবাদক, একজন নেতৃপুরুষ, একজন বিদগ্ধ লেখক, একজন সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি, একজন পরোপকারী-ত্যাগী মানব, একজন সুযোগ্য শিক্ষক, একজন আদর্শ পিতা, একজন রোমান্টিক প্রেমিক। আজ থেকে দুশ বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময় এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ছিল চরম বর্বরতার সমতুল্য। তখনকার দিনের এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপসহ অধিকাংশ রোগের চিকিৎসার জন্যই রোগীর শরীরে অনেকগুলো জোঁক লাগিয়ে দিতো রক্ত কমানোর জন্য অথবা রগ কেটে রক্ত বের করত, মানসিক রোগীকে ভুতে ধরেছে মনে করে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলত, একটি রোগের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে পনের থেকে বিশটি ঔষধ রোগীকে একত্রে খাওয়ানো হতো, সামান্য থেকে সামান্য ব্যাপারেও শরীরে ছুরি চালানো হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যানিম্যান কিন্তু অন্যান্য ডাক্তারদের মতো ডাক্তারী পাশ করে অর্থ উপার্জনের পেছনে লেগে যান নাই; বরং চিকিৎসার নামে এসব বর্বরতা থেকে মানবজাতিকে কিভাবে মুক্ত করা যায় তা নিয়ে যুগের পর যুগ গবেষণা করেছেন। এজন্য তাকে অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট, অপমান-লাঞ্ছনা, হুমকি-ধামকি, দেশ থেকে বহিষ্কার প্রভৃতি অনেক অনেক ভোগানি- সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু তারপরও তিনি পিছপা হননি। ফলে রোগের উৎপত্তি, রোগের বিকাশ, রোগের চিকিৎসা, ঔষধ আবিষ্কার, ঔষধ পরীক্ষাকরণ, ঔষধ প্রস'ত প্রণালী, ঔষধের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি এমন অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন ; গত দুইশ বছরেও যার চাই উৎকৃষ্ট কিছু আবিষ্কার করা কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর পক্ষে সম্ভব হয় নাই। তিনি এমন একটি চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছিলেন যাতে বাদশা থেকে ভিক্ষুক কাউকেই টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়। ডাক্তারদের মধ্যে পেশাগত অহমিকা, লোভ, হিংসা ইত্যাদি যে কত বেশী মাত্রায় আছে, তার প্রমাণ হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কার। রোগীকে কম কষ্ট দিয়ে, কম খরচে এবং কম সময়ের মধ্যে রোগ নিরাময়ের স্বার্থে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অমূল্য আবিষ্কারকে যেখানে সকল চিকিৎসকের সাদরে গ্রহন করা উচিত ছিল, সেখানে দেখা গেছে বেশীর ভাগ ডাক্তারই হ্যানিম্যানের এই অমূল্য আবিষ্কারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ইউরোপে এবং আমেরিকায় এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা প্রথম যখন সমিতি গঠন করেছিল, তখন তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বুক থেকে (একটি মানবতাবাদী চিকিৎসা বিজ্ঞান) হোমিওপ্যাথিকে নিশ্চিহ্ন করা। বাণিজ্যের কাছে সেবাধর্ম কিভাবে পরাজিত হয়, এসব ইতিহাস সবারই জানা থাকা উচিত। মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৫৫ সালের ১১ই এপ্রিল জার্মানীর স্যাক্সোনি প্রদেশের মেইসেন শহরে জন্মগ্রহন করেন, যার অবস্থান ড্রিসডেন শহরের বিশ মাইল উত্তর-পশ্চিমে (পোল্যান্ড এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার বর্ডারের কাছে)। তাঁর পুরো নাম ছিল ক্রিস্টিয়ান ফ্রেডরিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Christian Friedrich Samuel Hahnemann)। তাঁর পিতার নাম ছিল ক্রিস্টিয়ান গটফ্রাইড হ্যানিম্যান এবং মাতার নাম ছিল জোহান্না ক্রিস্টিয়ানা। তৎকালে মেইসেন শহরটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর কেননা ইহার চার হাজার অধিবাসীর অধিকাংশই ছিল দক্ষ শিল্পী, রসায়নবিদ এবং চিত্রকর। তাছাড়া এই শহরে ছিল একটি বিজ্ঞান একাডেমী, অনেকগুলো কাপড়ের কারখানা এবং ছিল তখনকার দিনের নতুন আবিষ্কার চীনা মাটির আসবাপত্রের একটি ফ্যাক্টরী। সিরামিকের এই কারখানাটি ছিল পুরনো পরিত্যক্ত একটি রাজ প্রসাদে অবসি'ত। হ্যানিম্যানের পিতা চীনা মাটির থালা-বাসনের ওপর ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই সব দিনে সিরামিকের তৈজষপত্রে রঙ এবং স্বর্ণ দিয়ে নক্সা করা এবং ছবি আঁকা ছিল একটি নতুন আবিষ্ককৃত প্রযুক্তি এবং এই কাজে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হতো তাদেরকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে গোপনীয়তা রক্ষার অঙ্গীকার করানো হতো। হ্যানিম্যানের পিতা ছিলেন একজন সৎ, বিচক্ষণ এবং ধার্মিক ব্যক্তি। ফলে ভালো এবং মন্দ, পাপ এবং পুণ্য, সরলতা এবং কুটিলতা ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা তিনি বাল্যকালেই হ্যানিম্যানের মনে দৃঢ়ভাবে গেথে দিয়েছিলেন। হ্যানিম্যান ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার পাঁচ সনতানের মধ্যে তৃতীয় এবং পুত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। শিশুকাল থেকেই তিনি পড়াশুনায় অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন বিশেষত ভাষা এবং বিজ্ঞানে। তিনি ইংরেজী, ফরাসী, গ্রিক, ল্যাটিন, সপ্যানিশ এবং আরবী ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন। সেকালে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরব দেশীয় মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের (ইবনে সীনা, ফারাবী, আল কিন্দি প্রভৃতি) লেখা পুস্তকসমূহ পড়ানো হতো; ফলে কারো পক্ষে সত্যিকারের চিকিৎসক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য আরবী ভাষা শেখা ব্যতীত কোন উপায় ছিল না। এমনকি মাত্র বারো বছর বয়সে তাঁর ওসতাদের নির্দেশে হ্যানিম্যান তাঁর সহপাঠিদের গ্রীক ভাষা শিক্ষা দিতেন। বলা হয়েছে বিজ্ঞান এবং গবেষণার দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল জন্মগত ; একেবারে মজ্জাগত। পাবলিক স্কুলে পড়াকালীন সময়ে মাস্টার মুলার নামক একজন যথার্থ যোগ্য শিক্ষকের স্নেহ লাভে ধন্য হন যিনি তাকে দৈনন্দিন পাঠ মুখসত না করে হজম করার পরামর্শ দিতেন। যোগ্যতা এবং দক্ষতার কারণে তিনি হ্যানিম্যানকে গ্রিক ভাষার ক্লাশ নিতে অনুমতি দিতেন। ফলে সহপাঠিরা হ্যানিম্যানকে ভালোবাসতো। অতিরিক্ত পড়াশোনার কারণে হ্যানিম্যান মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তেন এবং তখন এই মহান শিক্ষক তাঁর হোমওয়ার্ক, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি মাফ করে দিতেন। হ্যানিম্যানের জন্য তাঁর দরজা ছিল সারাক্ষণ খোলা ; যে-কোন সময় তিনি শিক্ষকের সাহায্য লাভ করতে পারতেন। হ্যানিম্যানের পিতা প্রায়ই তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিতেন, তাড়াতাড়ি আয়-রোজগার করা যায় এমন কোন পেশায় নিযুক্ত করার জন্য। মাস্টার মুলার তাঁর পড়াশোনা অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যালয়ের ফি পযর্ন্ত মওকুফ করে দিয়েছিলেন প্রায় আট বছর এবং নানানভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে-অনুরোধ করে হ্যানিম্যানকে রেখে তাঁর পিতাকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। ১৭৭৫ সালে হ্যানিম্যান পিতার কাছ থেকে কুড়িটি মুদ্রা (thalers) নিয়ে লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পিতার হাত থেকে নেওয়া এটাই ছিল তাঁর সর্বশেষ টাকা-পয়সা। এজন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না ; কেননা তার আরো অনেক সন্তানাদি ছিল এবং তার যৎসামান্য আয়-রোজগার দিয়ে সকলের জন্য শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ১৭৭৫ সালে তিনি লিপজিগ ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানকার অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন ; কেননা সেই ডিপার্টমেন্টের অধীনে না ছিল কোন ক্লিনিক, না ছিল কোন হাসপাতাল। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি অর্থের বিনিময়ে ইংরেজী থেকে জার্মানীতে পুস্তক অনুবাদের খন্ডকালীন কাজ হাতে নেন এবং একজন ধনী গ্রীক ব্যক্তিকে ফরাসী ভাষা শেখাতেন। ফলে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারতেন না। ১৭৭৭ সালের প্রথমার্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে এবং বাসতব অভিজ্ঞতা লাভের নিমিত্তে তিনি ভিয়েনা গমণ করেন।

Monday 24 October 2016

বজ্রপাত এর কথা the thender

বজ্রপাত সম্পর্কে কিছু তথ্য বজ্রপাত এমন একটি বিষয় যা সম্পর্কে বিজ্ঞান খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি।আসলে এটি খুব কঠিন একটি কাজ বজ্রপাত ব্যাখ্যা করা।তবুও বিজ্ঞানীরা কিছু তথ্য দিয়েছে।সেই আলোকে আমি এখন আপনাদের সামনে কিছু তথ্য তুলে ধরছি। তাপামাত্রাঃ ==> ৪০,০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গতিবেগঃ ==> ঘণ্টায় প্রায় ২,২০,০০০ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্যঃ ==> ১০০ মিটার – ৮ কিলোমিটার। ব্যাসার্ধঃ ==> ১০-২৫০ মিলিমিটার। বিদ্যুৎ প্রবাহঃ ==> ১০ কিলো – ১ কোটি ভোল্ট। স্থায়িত্বঃ ==> ১-২ মাইক্রো সেকেন্ড।

Friday 21 October 2016

হোমোপেথি or homophythi

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণকালীন আপনার করনীয়

আপনার করনীয়:

১. খালি পেটে ঔষধ সেবন করবেন। ঔষধ সেবনের আগে ১ ঘণ্টার মধ্যে ও সেবনের পরে আধা ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না। 
২. আপনার সহ্য হয় এমন পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাদ্য খাবেন। 
৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সময় আহার করবেন ও নিদ্রায় যাবেন। 
৪. দৈনিক কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাবেন। 
৫. দৈনিক প্রচুর শীতল পানি পান করবেন (৪ থেকে ৫ লিটার)। 
৬. নির্দোষ বিনোদন ও খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন। 
৭. প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় কমপক্ষে ১ ঘন্টা খোলা বাতাসে হাঁটবেন। সাধ্যমত শারীরিক পরিশ্রম করবেন। 
৮. সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন ও মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবেন। 
৯. মন থেকে সকল প্রকার কুচিন্তা বাদ দিয়ে ধর্মীয় জীবন-যাপনের চেষ্টা করবেন।

। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণকালীন যা করা নিষেধ:

১. ঔষধ সেবনের আগে ১ ঘণ্টার মধ্যে ও সেবনের পরে আধা ঘন্টার মধ্যে কিছু খাবেন না। 
২. ঔষধ খাওয়ার পরে ১ ঘণ্টার মধ্যে কোন প্রকার কষ্টকর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করবেন না। 
৩. কোন প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য, দাঁতের মাজন বা পেষ্ট ব্যবহার করবেন না। 
৪. টক ও টকজাতীয় দ্রব্য, নোনা মাছ, মদ, চা, কফি, তামাকসহ সকল উত্তেজক দ্রব্য এবং যে সব খাদ্য খেলে আপনার রোগ বাড়ে তা খাবেন না। 
৫. কুরুচিপূর্ণ বই-পুস্তক পাঠ ও কামোদ্দীপক আলাপ আলোচনা করবেন না। 
৬. অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করবেন না। অযথা উত্তেজিত হবেন না।

ক্রেডিটঃ মোখলেস, http://www.mokhlesbd.com/treatment/help.php

Friday 26 August 2016

The truth of jin and magic or জিন বা জাদুর কিছু কথা.

If anybody not see this post in your language. So please you translet by Google translate.

এই বিষয় পড়ার শুরুতে বলে রাখছি,

যে  ধৈর্য ধরে আমার লেখা পড়ুন বা

অন্য যারটাই পড়ুন. ধৈর্য সহকারে

পড়লে  অনেক কিছু জানতে ও

শিখতে পারবেন.

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

Lets come to the point.
 
জিন কি ?

আসলে  আমাদের মধ্যে যারা

মুসলমান. তাদের মধ্যে   কম বেশি

সবাই এই সম্পর্কে  জানে, তাও বলছি

যে জিন কিসের তৈরি.

জিন আগুনের তৈরি , তারা যে কোন

আকার নিতে পারে যেমন:

হাতি,মানুষ,ইত্যাদি. এছাড়া জিনদের

কিছু আলাদা শক্তি আছে যেমন:

হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো,নিমিষেই

যেকোন স্থানে যাওয়া,হাজার

মানুষের কাজ একলাই করা,ইত্যাদি.

বিশেষ দ্রষ্টব: হযরত মুহাম্মদ (স:) এর রূপ বাদে.

জিন চেনার উপায়:

আসলে এই দুনিয়া ভরা রহস্য. তাই

এই কম সময়ে সব বিষয়ের রহস্য ভেদ

করা সম্ভব নয়. কিন্তুু  সব বিষয় জানা

সম্ভব. চলুন তাই করি. প্রথমে

আপনাদের একটা রহস্যময় মন্ত দিই,

মন্তটি হলো:
       
               জিন দেখার মন্ত

           আলিফ লাম মিম ইয়াছিন
                ইয়া নুরু ইয়া বাতিনু
      দোহাই হলাহি জিন ইনছান মানব
              দানব দেও দৈত্য দানা.
        স্বচক্ষে দেখাও মোরে বিহাক্কে  
              হযরত নবী শাফিয়ানা.
             ইয়া জাহিরু ইয়া বাতিনু .

বিধি: 1 দিন পড়ে সিদ্ধ করা লাগবে.

আসলে সাধনে আজকের যুগে আমরা

কি করি , আগের কালের মানুষরা  তার

জিবনে পার করে দিত শুধু   একটি

বিষয় জানার জন্য.  তাই আমরা শুধু

মন্ত ও তন্ত্র জানলে হবে না.  আসলে

বিষয় মনে বিশ্বাস থাকতে হবে ও

নিজের কাজের প্রতি  বিশ্বাস থাকতে

হবে তাহলেই তাতে সফলতা পাওয়া

যায়.  কারন বিশ্বাস থাকলে সব সম্ভব.

আমরা জিন দেখিনা তারপরও বিশ্বাস

করি এর ফলে আমরা  নতুন বিষয় দিন

দিন খুজেঁ  বের করি  , কারন বিশ্বাস

আছি..

আপাদত এই মন্ত পড়ি পড়ের. পোস্টে

যা থাকবে তা হলো:

1) জিন এর বংশ বিস্তার

2) জিন খায় কি

3) জিনের বয়স কত.

আপনেরা পড়ে বেশি লাইক ও কমেন্ট

করবেন তাহলে আমি বুঝতে পারব

আাপনেরা খুশি.

                          

Thursday 14 July 2016

The mystery of name বা নাম ও জম্মদিনের তারিখ বের করে নিন নিজেই

পূর্বের পোস্টেই বলেছিলাম সংখ্যা

নির্ণয় পদ্ধতি জানাব, তাহলে আসুন

জেনে নেয়া যাক আমাদের

প্রত্যেকের সংখ্যাগুলি। সংখ্যা দুই

প্রকারে নির্ণয় করা যায়, একটি

জন্মসংখ্যা অপরটি নামসংখ্যা।

সঠিক জন্মতারিখ জানা থাকলেই

শুধু জন্মসংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব।

নতুবা নামসংখ্যাই ধরতে হবে।

উল্লেখ্য যে, জন্মসংখ্যার মত

নামসংখ্যা অতটা ভূমিকা রাখতে

পারেনা বলে জন্মসংখ্যার গুরুত্বই

বেশি। আবার জন্মসংখ্যাও দুই

প্রকারের, একটি জন্মদিনের সংখ্যা

অপরটি জন্মতারিখের সংখ্যা।

যেমন, কারো জন্ম ১৪ জুন ২০১৩

যদি হয়, তাহলে তার জন্মদিনের

সংখ্যা হল- ৫। আর তার

জন্মতারিখের সংখ্যা হল- ৮। যদিও

দুটি সংখ্যাই তার জীবনে প্রভাব

বিস্তার করবে, তবে জন্মদিনের

সংখ্যাই হবে মূখ্য। এবার বলছি

কিভাবে সংখ্যা দুটি নির্ণিত হল।

আমরা জানি একক সংখ্যা হল ১

থেকে ৯ । শূণ্য কোন সংখ্যা নয়।

বাকি সংখ্যাগুলি এই ১ থেকে ৯

এরই পুনরাবৃত্তি শুধু বা যৌগিক

সংখ্যা। অতএব পুনরাবৃত্তির

সংখ্যাগুলিকে পরস্পর যোগ করে

একক সংখ্যায় আনতে হবে যতক্ষণ

না একক সংখ্যায় আসে। যেমন, ১৪

জুন ২০১৩ এর জন্মতারিখের

সংখ্যা ৮ হল যেভাবে। ১+৪+৬ (জুন

মাসের সংখ্যা)+২+০+১+৩= পরস্পর

যোগ করে হয় ১৭। যেহেতু ১৭ কোন

একক সংখ্যা নয় তাই এটিকেও

পরস্পর যোগ করতে হবে। যেমন,

১+৭= ৮ । আর জন্মদিনের সংখ্যা ৫

হল ১ আর ৪ এর যোগফল। উল্লেখ্য

যে, জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর অবধি

মাসকে ১ থেকে ১২ ধরতে হবে।

আরো উল্লেখ্য যে, এই পদ্ধতিতে

শুধুমাত্র যেকোন খ্রিস্টীয় সনের

জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর অবধি

যেকোন মাসের তারিখ গ্রহন করতে

হবে। আরো পরিষ্কার করে বলছি,

যাদের জন্ম যেকোন মাসের ১, ১০,

১৯ ও ২৮ তারিখে তাদের

জন্মদিনের সংখ্যা- ১। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ২, ১১, ২০ ও ২৯ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ২। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৩, ১২, ২১ ও ৩০ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৩। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৪, ১৩, ২২ ও ৩১ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৪। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৫, ১৪ ও ২৩ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৫। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৬, ১৫ ও ২৪ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৬। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৭, ১৬ ও ২৫ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৭। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৮, ১৭ ও ২৬ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৮। যাদের জন্ম যেকোন মাসের ৯, ১৮ ও ২৭ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা- ৯। এবার নামসংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র বলছি। এই পদ্ধতিতেও শুধুমাত্র ইংরেজি বর্ণমালাকে গ্রহন করতে হবে। আমরা সকলেই জানি ইংরেজি বর্ণমালায় ২৬টি বর্ণ আছে। এই ২৬টি বর্ণকে ১ থেকে ৯ সংখ্যায় আনতে হবে নিম্নোল্লেখিতভাবে। যেমন, A, I, J, Q, Y এর মান হল- ১। B, K, R এর মান হল- ২। C, G, L, S এর মান হল- ৩। D, M, T এর মান হল- ৪। E, H, N, X এর মান হল- ৫। U, V, W এর মান হল- ৬। O, Z এর মান হল- ৭। F, P এর মান হল- ৮। এই হল ২৬টি বর্ণের মান। এবার নির্ণয় করি কারো নাম FARIDA YASMIN হলে তার নামসংখ্যা কত ? F ৮+A ১+R ২+I ১+D ৪+A ১= ১৭ অর্থাৎ ১+৭= ৮ এবং Y ১+A ১+S ৩+M ৪+I ১+N ৫=১৫ অর্থাৎ ১+৫= ৬। পূর্ণ নামের সংখ্যা ৮+৬= ১৪ অর্থাৎ ১+৪= ৫। তাহলে দেখা যাচ্ছে ৮ ও ৫ দুটি সংখ্যাই এক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে। কেননা FARIDA YASMIN কে সচরাচর FARIDA সম্ভোধনও করা হয়ে থাকে। আবার কারো নাম TOUHIDUL ISLAM SHILU হলে তার নামসংখ্যা কত ? T ৪+O ৭+U ৬+H ৫+I ১+D ৪+U ৬+L ৩= ৩৬ অর্থাৎ ৩+৬= ৯, I ১+S ৩+L ৩+A ১+M ৪= ১২ অর্থাৎ ১+২= ৩, আবার S ৩+H ৫+I ১+L ৩+U ৬= ১৮ অর্থাৎ ১+৮= ৯। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে TOUHIDUL ISLAM SHILU পূর্ণ নামের সংখ্যা ৯+৩+৯= ২১ অর্থাৎ ২+১= ৩ এবং শুধুমাত্র SHILU নামের সংখ্যা ৯। তার অর্থ ৩ ও ৯ দুটি সংখ্যাই এক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে।

এভাবেই সকল নামের সংখ্যা নির্ণয়

করতে হবে। উল্লেখ্য যে, জন্মদিনের

সংখ্যার সাথে মিলিয়ে শিশুর নাম

রাখা উচিত, তবেই নামসংখ্যা

জন্মসংখ্যা এক হতে পারে। নতুবা

দুটি সংখ্যাই জীবনে প্রভাব বিস্তার

করবে। পরবর্তীতে কোন সংখ্যার

লোকেরা কেমন হয় তা লিখার চেষ্টা

করব ইনশাল্লাহ্।

Tuesday 12 July 2016

The mystry jungle or কামরুখ কামাখ্যা জঙ্গল

এবং রামায়ণে এই অঞ্চলকে প্রাগজ্যোতিষ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ইরিত্রিয় সাগরের পেরিপ্লাস (প্রথম শতাব্দী) এবং টলেমির জিওগ্রাফিয়াতে (দ্বিতীয় শতাব্দী) এই অঞ্চলকে কিরহাদিয়া নামে আখ্যায়িত করেছে যা কিরাত জনগণের নামে নামাঙ্করণ করা হয়েছে। কামরূপের প্রথম মহাকাব্যিক উল্লেখ পাওয়া যায় ৪র্থ শতাব্দীর সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদের প্রশস্তিতে, যা এক ঐতিহাসিক সময়কালের সুচনাপাতের নির্দেশক। চৈনিক পর্যটক সুয়ানচাং ৭ম শতাব্দীর দিকে ভাস্করবর্মণের শাসনকালে এই রাজ্য ভ্রমণ করেন। কামরূপের রাজাদের বিশেষ করে ভাস্করবর্মণের বিভিন্ন অভিলিখন থেকে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। কালিকা পুরাণ এবং চৈনিক পর্যচক সুয়ানচাং-এর মতে কামরূপের পশ্চিম সীমানায় ঐতিহাসিক করোতয়া নদী এবং পূর্ব সীমায় তামেশ্বরী দেবীর মন্দির যা ছিল আসাম রাজ্যের সর্বপূর্বে অবস্থিত বর্তমান সাদিয়ার নিকট। দক্ষিণ সীমানা ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা এবং ময়মনসিংহ জেলার মধ্যবর্তী এলাকায়। ফলে এটি সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নিয়ে গঠিত ছিল এবং সময়ে সময়ে বর্তমান সময়ের ভুটান এবং বাংলাদেশের কিছু অংশও এর অধীন ছিল। এর প্রমাণ এই অঞ্চলে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলাদি থেকে পাওয়া যায়। রাজ্যটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে সম্পুর্নরূপে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে পরিণত হয় এবং এগুলোর মধ্য হতেই এই রাজ্যের উত্তরসুরী হিসেবে পশ্চিমে কামাতা রাজ্য এবং পূর্বে অহোম রাজ্যের উথ্থান ঘটে। ১৫৮১ সালে কামাতা রাজ্যের তদানীন্তন শাসক কোচ রাজা নারায়ণ রায় তাঁর রাজ্যকে দুই ভাগ করেন এবং শঙ্কোশ নদীর পশ্চিম অংশ নিজে রেখে পূর্ব অংশ তার ভাইয়ের ছেলে চিলারায়কে উপঢৌকন দেন। বর্তমান আসাম-পশ্চিমবঙ্গ সীমানার মধ্যে এই বিভাজনের গভীর ছাপ লক্ষ করা যায়। নারায়ণের শাসনামলের পর ১৬০২ থেকে পরবর্তীতে পূর্বকোচ রাজ্য বারংবার মুঘলদের আক্রমণের স্বীকার হয় এবং ১৬১৫ সালে এটি মুঘল এবং অহমদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় যা কিনা সপ্তাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চলতে থাকে যখন অহোমরা মুঘলদের শেষবারের মতো পিছু হটতে বাধ্য করে। রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অহোমদের হাতে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের আগমনের আগে পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে। পৌরানিক কাহিনী বলে --- - সৃষ্টির একবারে আদি মুহূর্তে সৃষ্টি কর্তারা যখন জগত তৈরির কাজে ব্যস্ত হলেন। পাগল শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। ধ্বংসের দেবতা যদি অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেন তাহলে সৃষ্টি হবে কি করে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু পরলেন মহা ফাঁপরে। বিষ্ণুর বুদ্ধিতে ব্রহ্মা নিজের মানসপুত্র দক্ষকে ডেকে পাঠালেন। দক্ষ এলেন ব্রহ্মার কাছে। - ব্রহ্মা তাঁকে বললেন- -তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। - দক্ষ পিতৃ আজ্ঞা পালনের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠলেন- -বলুন পিতা আমাকে কি করতে হবে। - ব্রহ্মা তখন বললেন- -দেখো দেবাদিদেব মহাদেব মহাযোগে তন্ময় হয়ে আছেন। এইরকম ভাবে চললে সৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটবে। ধ্বংস না হলে সৃষ্টি করবো কি করে ? তুমি জগন্মাতার পূজা করো। প্রার্থনা করো তিনি যেন তোমার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে শিবের পত্নী হন। - পিতৃ আজ্ঞা পালনে দক্ষ তৎপর হয়ে উঠলেন। এবং নিজের কাজে মনোনিবেশ করলেন। দেবী মহামায়া দক্ষের আকুল প্রার্থনায় প্রীত হয়ে আবির্ভূতা হয়ে দক্ষকে এই বর দিলেন যে - "আমি তোমার কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করবো এবং শিবকে স্বামীরূপে গ্রহণ করবো। কিন্তু একটা কথা তোমায় মনে রাখতে হবে, যখনই আমার অনাদার হবে আমি দেহত্যাগ করবো।" দক্ষ দেবী মহমায়ার কথা মেনে নিলেন। যথা সময়ে মহামায়া দক্ষরাজার পত্নী বীরিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন এবং মহাদেবকে বিবাহ করলেন। মহামায়া সতী নাম নিয়ে স্বামীর সঙ্গে চলে এলেন শ্বশুর বাড়ি কৈলাসে। কিছুদিন পর স্বর্গরাজ্যে একটা অনুষ্ঠানে দক্ষরাজ নিমন্ত্রিত হয়ে এলেন। দেবসভা মাঝে পাগল শিব শ্বশুর দক্ষকে পাত্তাই দিলেন না। জামাই-এর এরকম অভব্য ব্যবহারে দক্ষ বেশ অপমানিত বোধ করলেন। শিবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য দক্ষরাজ এক শিবহীন যজ্ঞের আয়োজন করলেন। তাতে দেবর্যি নারদকে ত্রিভুবনের সকলকে আমন্ত্রণের কথা বললেও শিবকে আমন্ত্রণ জানাতে নিষেধ করলেন। যথা সময়ে দক্ষরাজের যজ্ঞ শুরু হলো। নারদের মুখে সতী পিত্রালয়ে যজ্ঞ হচ্ছে শুনে, সেখানে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হলেন। স্বামীর অনুমতি নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে এলে শিব পাত্তাই দিলেন না। শেষে সতী দশমহাবিদ্যা রূপ দর্শন করালেন। তখন শিব সতীকে পিত্রালয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিলেন। এরপর সতীদেবী পারিষদদের নিয়ে যজ্ঞ স্থলে উপস্থিত হলেন। কিন্তু পিতা দক্ষ সতীকে দেখে গালমন্দ শুরু করলেন। কেন সে নিমন্ত্রিত না হয়েও এখানে এসেছে। শিবের প্রতিও অপমানসূচক মন্তব্য করলেন। অতো লোকের মাঝে পতিনিন্দা শুনে সতীর মুখ চোখ লাল হয়ে গেল। যজ্ঞস্থলেই সতী দেহত্যাগ করলেন। শিব তার দুই চেলা নন্দী- ভিরিঙ্গির মুখে সতীর দেহত্যাগের কথা শুনে রেগে লাল হয়ে গেলেন। বীরভদ্রাদি অনুচরদের নিয়ে শিব দক্ষের যজ্ঞশালায় উপস্থিত হলেন। সতীর মৃতদেহ দেখে শিব আর স্থির থাকতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে অনুচরদের বললেন যজ্ঞ লণ্ড-ভণ্ড করে দাও আর দক্ষকে হত্যা করো। শিবের আজ্ঞা পেয়ে অনুচরেরা সব লণ্ড-ভণ্ড করে দিল ও ধড় থেকে দক্ষের মথা আলাদা করে দিল। দক্ষরাজের স্ত্রী, শিবের শ্বাশুড়ী, জামাই-এর কান্ডে হতবাক। স্বামীর মৃত্যুতে শোকাতুর হয়ে উঠলেন। তিনি শিবের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা করে স্তব স্তুতি করতে শুরু করে দিলেন। শেষে শিব ছাগলের মুন্ডু কেটে দক্ষের মাথায় বসিয়ে দিয়ে তাকে জীবনদান করলেন। এরপর শিব অনুচরদের কৈলাসে পাঠিয়ে সতীর দেহ নিয়ে ত্রিভুবন দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করলেন। শিবের এই উন্মত্ত আস্ফালনে ত্রিভুবনে প্রলয়কান্ড শুরু হয়েগেল। ব্রহ্মা ভয়ে তটস্থ হয়ে সৃষ্টি রক্ষার তাগিদে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলো। যেহেতু উনি এই ধরাধামের পালনকর্তা। সতীর শবদেহ চিন্ময়বস্তু। শিবগাত্র স্পর্শে তার মহিমা হাজার গুণ বেড়ে গেছে। জগৎপালক বিষ্ণু তখন জগতের মঙ্গলকামনার্থে তাঁর সুদর্শন চক্রের সাহায্যে ধীরে ধীরে একান্ন খন্ডে বিভক্ত করলেন। দেবীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধরাধামের যেখানে যেখানে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে তা পাথরে পরিণত হলো। সেই সব স্থান পবিত্র মহাপীঠ রূপে প্রসিদ্ধ লাভ করলো। এই একান্নটা মহাপীঠ ছাড়াও ছাব্বিশটা উপপীঠ রয়েছে। কামরূপে মায়ের মাতৃঅঙ্গ পতিত হয়েছিল। যে স্থানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল সেই স্থান হচ্ছে তীর্থচূড়ামণি। তীর্থচূড়ামনির অর্থ হলো সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থ স্থান। যেখানে সতীর যোনি মন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ। কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। এই প্রসঙ্গে কালিকাপুরাণের একটা গল্প ছিলো। কালিকাপুরাণের ছাব্বিশতম অধ্যায়ে কামাক্ষার বর্ণনা রয়েছে। পূর্বে এই পর্বতের উচ্চতা ছিল শতেক যোজন। কিন্তু মহামায়া সতীর যোনি অঙ্গ পতিত হওয়ার পর এই উচ্চ পর্বত মহামায়র যোনি মন্ডলের ভার সহ্যে করতে না পেরে কেঁপে উঠলো এবং ক্রমশঃ পাতালে প্রবেশ করতে লাগলো। তখন শিব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু প্রত্যেকে একটা করে শৃঙ্গ ধারন করলেন। তাদের সঙ্গে মহামায়া স্বয়ং সমবেত হলেন। এবং পাতাল প্রবেশ থেকে রক্ষা করলেন এই শৃঙ্গকে। ফলে পর্বতের উচ্চতা একশতো যোজন থেকে এক ক্রোশ উঁচু হয়ে গেল। আর মাতৃ যোনি পতিত হওয়ার ফলে পর্বতের রং নীল বর্ণ আকার ধারণ করলো। তাই পর্বতের নাম হলো নীলাচল পর্বত। এই মহামায়া নিখিল জগতের প্রকৃতি এবং এই জগতের প্রসব-কারিণী তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তাকে ধারণ করে রেখেছেন। এদিকে মহাযোগী মহাদেব, স্ত্রী সতী বিরহে পাগল প্রায় অবস্থা। তাঁর মনে মহাবৈরাগ্যের উদয় হলো। তিনি হিমালয়ের দুর্গম স্থানে গিয়ে তপস্যায় নিমগ্ন হলেন। সেই মহাযোগীর ধ্যান ভঙ্গ করে কার সাধ্য। দক্ষযজ্ঞে সতীদেবী প্রাণত্যাগ করার পর গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে মেনকার গর্ভে কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করলেন। শিশু কন্যাকে সকলে গিরিজা, পার্বতী আরও নামে ডাকতে শুরু করলেন। এদিকে পিতামহ ব্রহ্মা তারকসুর নামে অসুররাজের কঠোর তপস্যায় সুপ্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিলেন ত্রিভুবন শিবের ঔরাসজাত সন্তান ভিন্ন কেউই তাকে বধ করতে পারবে না। ব্রহ্মার বরে বলীয়ান তারকাসুর ত্রিলোক জয় করে দেবতাদের প্রজা বানিয়ে দিলেন। ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ ব্রহ্মার শরাণাপন্ন হয়ে তাঁকে সব জানালেন। ব্রহ্মা সব শুনেটুনে বেশ চিন্তিত হয়ে পরলেন। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর তিনজনে সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়ের কর্তা একজন এইভাবে উদাসীন হয়ে পরলে সৃষ্টিরক্ষা করা মহা মুস্কিল। তার ওপর তারকাসুরের ঝামেলা। ব্রহ্মা তখন দেবতাদের ডেকে বললেন,সতী দেহত্যাগের পর গিরিরাজের ঔরসে মেনকার গর্ভে স্থান পেয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। একমাত্র শিব বীর্য হতে উৎপন্ন সন্তান তারকাসুরকে বধ করতে পারবে। সবশুনে-টুনে দেবতারা যেন একটা ক্ষীণ আলোর রেখা দেখতে পেল। প্রথমে শিবের ধ্যান ভঙ্গ করতে হবে, দ্বিতীয় শিবের বিয়ে দিতে হবে। চলো নারদের কাছে। নারদ দেবতাদের কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠলেন। চলে গেলেন হিমালয় রাজের কাছে। গিরিরাজ এবং তার স্ত্রী মেনকা সব শুনে মহা খুশী। তার কন্যার সঙ্গে শিবের বিয়ে হবে। এর থেকে সুখবর আর কি আছে।অনেক খোঁজা খুঁজির পর মহাদেবের দুর্গম যোগসাধনের স্থান খুঁজে বার করা হলো। গিরিরাজ হিমালয় এবং তাঁর স্ত্রী মেনকা দেখে এলেন শিবের সেই সাধনের স্থান। তাঁর রাজপ্রসাদ থেকে সেটা খুব একটা দূরে নয়। দেবর্ষি নারদের কথা মতো তিনি পার্বতীকে পাঠালেন মহাদেবের পূজা আর সেবা করার জন্য। পার্বতীও মহা আনন্দে সখীদের নিয়ে প্রত্যহ শিবের পূজা শুরু করলেন। সতীর মুখের ছায়া পার্বতীর মুখ মন্ডলে। একবার শিবের ধ্যানভঙ্গ হলে তিনি যদি পার্বতীকে দেখেন তাহলে পার্বতীকে পাওয়ার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠবেন। মহাদেব নিজেই গিরিরাজের কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাবেন। কিন্তু মহাযোগী শিব একদিনও পার্বতীর উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন না। ব্রহ্মা বিষ্ণু পরলেন মহা সংকটে। দেবতাদের সঙ্গে ব্রহ্মা বিষ্ণু পরামর্শ করে স্থির করলেন, একমাত্র শিবের মধ্যে কামের উদ্রেক জাগাতে পারলেই তার ধ্যানভঙ্গ হওয়া সম্ভব।ডাক পরলো কাম দেবের। বুঝিয়ে দেওয়া হলো তার কাজ। যথা সময়ে কামদেব স্ত্রী রতিকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন হিমালয়ের শিখরে। ফুল শর নিক্ষেপ করে কামদেব মহাদেবের ধ্যানভঙ্গ করলেন। ধ্যানভঙ্গ হওয়ার পরই মহাদেবের রোষানলে পরলেন মদন কামদেব। শিবের তৃতীয় নয়নের অগ্নিবর্ষণে কামদেব ভষ্মে পরিণত হলো। রতি মূর্ছা গেল। দেবতারা পরলেন মহা বিপদে। এক বিপদ যায়, আর এক বিপদ এসে উপস্থিত হয়। দেবতারা কোনপ্রকারে রতিকে সুস্থ করে বললেন, তুমি ভয় পরিত্যাগ করে এই ভস্মগ্রহণ করো,শিব সুপ্রসন্নহলে আমরা তোমার প্রাণবল্লভকে পুণঃ জীবনদান করবো। কামদেব ভষ্মীভূত হওয়ার পর শিবের উগ্রচন্ডীভাব কিছুটা স্তিমিত হলো। পার্বতীর দিকে চোখ পরতেই তিনি চঞ্চল হয়ে উঠলেন। খুব চেনা চেনা মুখ। তারপরেই আবার গম্ভীর হয়ে নিজের যোগাসন থেকে উঠে সেই স্থান পরিত্যাগ করলেন। পার্বতীও ছাড়বার পাত্র নয়। শিবকে পাওয়ার জন্য তিনি তপস্যায় ব্রতী হলেন। শিব পার্বতীর তপস্যায় গলে জল হয়েগেলেন। সময় সুযোগ করে মহাধুমধাম সহকারে তিনি পার্বতীকে বিবাহ করলেন। দেব-দেবাদিদেব সকলেই মহাদেবের বিবাহে উপস্থিত রইলেন। রতিও সেই বিবাহে উপস্থিত হলেন। নিজের স্বামীকে ফিরে পাবার জন্য তিনি শিবের কাছে কাকুতি মিনতি করতে শুরু করলেন। দেব-দেবীগণ সকলেই শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন রতির স্বামী কামদেবকে পুনঃ জীবিত করা হোক। শিব রতির হাতে ধরা সেই ভস্মাধারে তাঁর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সেই ভস্মাধার থেকে কামদেবের পুনঃ জন্ম হলো। রতি স্বামী পেলেন। কিন্তু এই কামদেবের রূপের বিপর্যয় ঘটেছে। কামদেবের সেই কাম রূপ স্বরূপ-কান্তি আর নেই। দুজনেই আবার শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন, ফিরিয়ে দেওয়া হোক তার আগের রূপ। তখন মহাদেব বললেন- ভারতবর্ষের ঈশানকোনে নীলাচল পর্বত রয়েছে। সেখানে সতীদেহের একান্নটা খন্ডের এখনো একটা খন্ড অনাবিষ্কৃত রয়েছে। সেটি মহামায়ার মহামুদ্রা। সেখানে গিয়ে দেবীর মহিমা প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করলে তুমি তোমার আগের রূপ আবার ফিরে পাবে। কামদেব নীলাচলে এসে মহামায়ার সেই মহামুদ্রা প্রস্তরখন্ড রূপে খুঁজে পেলেন এবং ভক্তি সহকারে পূজা পাঠ করলেন। মহামায়া কামদেব এবং রতির প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে তার আগের রূপ প্রদান করলেন। এই যে কামদেব এখানে এসে তাঁর আগের রূপ ফিরে পেলেন তাই জায়গার নাম হলো কামরূপ। কামদেব তাঁর স্বীয় রূপ ফিরে পাবার পর। দেবীর পূজা যাতে সঠিক ভাবে হয় তাই তিনি বিশ্বকর্মাকে ডেকে পাঠালেন। মহামায়ার জন্য মন্দির তৈরি করতে হবে। বিশ্বকর্মা জায়গা দেখে ভীষণ আনন্দ পেলেন। সব শোনার পর তিনি মন্দির নির্মান করলেন। মন্দিরের গায়ে চৌষট্টি যোগিনী, আর আঠারোটা ভৈরব-মূর্তি খোদাই করলেন। কামদেব এই মন্দিরকে আনন্দাখ্যা মন্দির নাম জগতে প্রচার করলেন। আর মহামায়া মায়ের মহামুদ্রার নাম হয় মনোবভগুহা। অতীতে কামরূপে বহু হিন্দু রাজা রাজত্ব করেছেন। কিন্তু তাদের ধারাবাহিক ইতিহাস বিলুপ্ত। অনেক ধর্মবিপ্লব এবং যুগবিপ্লবের সাক্ষী কামদেব প্রতিষ্ঠিত মন্দির কামরূপ কামাখ্যা। কালের অতলে একদিন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেল এই মন্দির। নীলাচল পর্বতের ওই স্থান ঘন জঙ্গলে ভরে গেল। শক্তিময়ী মা কামাখ্যার কথা ভুলেই গেল সকলে। বৌদ্ধযুগের পর গুপ্তবংশের রাজারা কামরূপে বেশ কিছুদিন রাজত্ব করেন। বিশেষ করে বিক্রমাদিত্যের সময় থেকে হিন্দুধর্ম আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১১৫০ সালে পালবংশের ধর্মপাল বর্তমান গৌহাটিরপশ্চিমখণ্ডে রাজত্ব করতেন। তিনি খুব ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিছিলেন। তিনি আবার কামাখ্যা দেবীকে নীলাচল পর্বতে খুঁজে বার করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মপালই মায়ের যথাবিধি পূজার্চনার জন্য কনৌজ থেকে অনেক সদব্রাহ্মণকে কামরূপে নিয়ে আসেন।এরা বাসত্তরীয় ব্রাহ্মণ নামে খ্যাত। এঁরাই কামাখ্যা দেবীর মন্দিরের আদি পূজারী। পালবংশের শাসনের পর মন্দিরের আবার অবলুপ্তি ঘটে। মা কামাখ্যা হারিয়ে যান নীলাচলের গহীণ অরণ্যে। বারভুঞ্যাদের সময় মন্দিরের ইতিহাস অতোটা পরিষ্কার জানা যায় না। পরে কামরূপের শাসন ভার করায়ত্ত করেন মেছ বা কোচবংশীয় শাসনকর্তা। এরা হাজো বংশীয় নামে পরিচিত ছিলেন। ১৪৮৫ সালে এই বংশের বিশু নামে এক শক্তিমান পুরুষ রাজা হন। ১৪৯০ সালে তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে বিশ্বসিংহ নাম পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর ভাই শিশু শিবসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করেন। পরে এই বিশ্বসিংহ মন্দিরের পুনর্নির্মাণ করেন এবং তৎকালীন কামতাপুর বর্তমান কোচবিহারে এসে বসবাস শুরু করেন। যেখানে সতীর যোনিমন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ। কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। এই প্রাচীন মন্দিরটিই কামাক্ষা দেবীর মন্দির নামে পরিচিত। পুরোহিতদের কথামতো মন্দিরে পুজো পর্ব সম্পাদন করা । প্রধান মন্দিরের বাইরের সৌভাগ্যকুণ্ড থেকে মাথায় জলের ছিটে দিয়ে শুরু করা হয় পুজো পর্ব। সেখানে অসমিয়া ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘যখনই মুখ খুলিবেন, মা কামাক্ষার নাম বলিবেন।’ দেশের অন্যান্য বড় মন্দিরের মতোই নগদমূল্যে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন স্তরে। দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। অনেকেই বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে দাড়িয়ে পূজা সারেন। এই মন্দিরে দেবীর কাছে প্রার্থনা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে তারা ঘন্টা বেধে যান। কামাখ্যা মন্দিরের চুড়া সপ্তরথ আকৃতির। তার গড়নে পাওয়া যায় মৌচাকের আদল। সাতটি ডিম্বাকৃতি গম্বুজের প্রতিটির ওপর তিনখানা স্বর্ণকলস বসানো আছে। মন্দিরের বহিরাংশে গণেশ ও অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিকৃতি ও পুরাণ কাহিনীর নানা খণ্ডচিত্র খোদাই করা প্যানেলের সারি। মন্দিরের ভেতরে তিনটি প্রকোষ্ঠ। সবচেয়ে বড় পশ্চিম প্রকোষ্ঠটি আয়তাকার। এখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। মাঝের কক্ষটি বর্গাকার। এখানে দেবী কামাখ্যার চলন্তা মূর্তি আছে। দেওয়াল জুড়ে খোদাই করা শিলালিপি, মহারাজ নরনারায়ণ এবং অন্য হিন্দু দেবতার মূর্তি দেখা যায়। এই প্রকোষ্ঠর পরেই গুহা সংবলিত গর্ভগৃহ শুরু হয়েছে। গুহার দেওয়ালে কোনও ছবি বা খোদাইয়ের কাজ নেই। সরু সিঁড়ির ধাপের শেষে যোনি আকৃতির পাথরের ফাটল থেকে ঝরে পড়ছে প্রাকৃতিক ঝরণাধারা। জলের ধারা সৃষ্ট করেছে একরত্তি জলাশয় যার ধারে অবিরাম পূজার্চনা চলে। ধারার উৎসমুখ ঢাকা এক টুকরো লাল কাপড়ে। আষাঢ় মাসে অম্বুবাচী মেলার সময় কামাখ্যা মন্দির তিন দিন বন্ধ থাকে। এই সময় গর্ভগৃহের চারপাশের জল রক্তিম হয়ে যায়। দেবী রজঃস্বলা হন। তাই মন্দিরে প্রবেশ করা সকলের জন্য নিষিদ্ধ। শোনা যায় এক তরুণ পূজারী সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় দেবীর কোপে তিনি দৃষ্টিহীন হয়ে যান। জনশ্র“তি যে, কোচবিহারের যে রাজবংশ দেবীর প্রধান ভক্ত ছিল, দেবীর আদেশে তাদেরই মন্দিরে পুজো দেওয়া বারণ ছিল। এখনও রাজবংশের কেউ নীলাচল পর্বতের পাশ দিয়ে গেলে মন্দিরের দিকে তাকান না। তন্ত্র'- ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু গভীর তার অন্তর্নিহিত অর্থ। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও অতিপ্রাচীন গুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় বিষয়। মুক্ত বিশ্বকোষে বলা আছে, তন্ত্র হিন্দুসমাজে প্রচলিত ঈশ্বর উপাসনার একটি পথবিশেষ। শিব ও মহাশক্তির উপাসনা সংক্রান্ত শাস্ত্রগুলিকেও তন্ত্র সাধনা নামে অভিহিত করা হয়। তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী, এই মহাবিশ্ব হল শিব ও মহাশক্তির দিব্যলীলা। তন্ত্রে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির বর্ণনা রয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।ভারতের আদি ও অকৃত্রিম তন্ত্র সাধনার জায়গা হল নীলাচল পর্বত। যা 'কামাখ্যাধাম' নামে পরিচিত। তন্ত্র এমনই একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে নিজেকে অনুসন্ধান করা যায়। নিজের অন্তরের ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায়।তন্ত্র প্রাক্ বৈদিক আচার হ'লেও খ্রিস্ট্রীয় প্রথম সহস্রাব্দের প্রথম দিকে সাধারণের মধ্যে তন্ত্র সাধনা বিকাশ লাভ করে। গুপ্তযুগের শেষভাগে এই প্রথার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। মূলত বৌদ্ধধর্মের হাত ধরেই পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করে এই তন্ত্রশাস্ত্রটি। তন্ত্র ভারতের অতিপ্রাচীন এবং গুরু পরম্পরার একটি গুপ্ত বিদ্যা। প্রাচীন ভারত থেকে বহু মূল্যবান পুঁথি চীনা পরিব্রাজকরা তাঁদের দেশে নিয়ে চলে গেছেন। এটি গুরু পরম্পরা বিদ্যা বলে প্রকৃত গুরুর খোঁজ করতে হয়। দীক্ষা ছাড়া এ শাস্ত্র সম্পর্কে সহজে কেউ কাউকে কিছু ব্যক্ত করেন না।

Sunday 10 July 2016

আকীদার কাহিনী

আক্বীদার কথা: ১। আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত অন্য দৃশ্য-অদৃশ্য যাহাকিছুর অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে, প্রথমে তাহা কিছুই ছিল না। আল্লাহ্ তায়ালা পরে এসকল সৃষ্টি করিয়াছেন। ২। আল্লাহ্ এক, তিনি কাহারও মুখাপেক্ষী বা মোহতাজ[2] নহেন, তিনি কাহাকেও জন্ম দেন নাই, তাঁহাকেও কেহ জন্ম দেয় নাই, তাঁহার স্ত্রী নাই, তাঁহার মোকাবেল[3] কেহ নাই। ৩। তিনি অনাদি এবং অনন্ত, সকলের পূর্ব হইতে আছেন, তাঁহার শেষ নাই। ৪। কোন কিছুই তাঁহার অনুরূপ হইতে পারে না। তিনি সর্বাপেক্ষা বড় এবং সকল হইতে পৃথক। ৫। তিনি জীবিত আছেন। সর্ববিষয়ে উপর তাঁহার ক্ষমতা রহিয়াছে। সৃষ্টজগতে তাঁহার অবিদিত কিছুই নাই। তিনি সবকিছুই দেখেন, সবকিছুই শুনেন। তিনি কথা বলে; কিন্তু তাঁহার কথা আমাদের কথার ন্যায় নহে। তাঁহার যাহা ইচ্ছা হয় তাহাই তিনি করেন, কেহই তাহাতে কোনরূপ বাঁধা দিতে পারে না। একমাত্র তিনিই এবাদতের যোগ্য; অর্থাৎ, অন্য কাহারও বন্দেগী করা যাইতে পারে না। তাঁহার কোনই শরীক নাই। তিনি মানুষের উপর বড়ই মেহেরবান। তিনি বাদশাহ। তাঁহার মধ্যে কোনই আয়েব বা দোষ-ত্রুটি নাই। তিনি সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি ও আয়েব-শেকায়েৎ হইতে একেবারে পবিত্র। তিনি মানুষকে সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ হইতে রক্ষা করিয়া থাকেন। তিনিই প্রকৃত সম্মানী। তিনিই প্রকৃত বড়। তিনি সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করিয়াছেন। তাঁহাকে কেহই সৃষ্টি করে নাই। তিনিই মানুষের গুনাহ মাফ করেন। তিনি জবরদস্ত ও পরাক্রমশালী, বড়ই দাতা। তিনিই সকলকে রুজি দেন এবং আহার দান করেন। তিনিই যাহার জন্য ইচ্ছা করেন রুজি কম করিয়া দেন, আবার যাহার জন্য ইচ্ছা করেন রুজি বৃদ্ধি করিয়া দেন, তিনি আপন ইচ্ছানুযায়ী কাহাকেও মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়া দেন, আবার কাহাও মান-মর্যাদা হ্রাস করিয়া দেন। মান-সম্মান হ্রাস-বৃদ্ধির অধিকারী তিনিই; অবমাননা, অসম্মান করার মালিকও তিনিই। তিনি বড়ই ন্যায় বিচারক। তিনি বড়ই ধৈর্যশীল, সহিষ্ণু। যে তাঁহার সামান্য এবাদতও করে, তিনি তাহার বড়ই ক্বদর করেন অর্থাৎ সওয়াব দেন। তিনি দোয়া কবুল করেন। তাঁহার ভাণ্ডার অফুরন্ত। তাঁহার আধিপত্য সকলের উপর; তাঁহার উপর কাহারও আধিপত্য নাই। তাঁহার হুকুম সকলেই মানিতে বাধ্য; তাঁহার উপর কাহারও হুকুম চলে না। তিনি যাহাকিছু করেন সকল কাজেই হিকমত থাকে, (তাঁহার কোন কাজই হিকমত ছাড়া হয় না। তাঁহার সব কাজই ভাল। তাঁহার কোন কাজে দোষের লেশমাত্রও থাকে না।) তিনি সকলের চেষ্টাকে ফলবতী করেন। তাঁহার সাহায্যেই সকলকে পয়াদ করিবেন। তিনিই জীবনদাতা এবং তিনিই মৃত্যুদাতা। ছিফৎ (গুণাবলী) এবং নিদর্শন দ্বারা সকলেই তাঁহাকে জানে; কিন্তু তাঁহার যাতের বারিকী বা সূক্ষ্ণতত্ত্ব কেহই বুঝিতে পারে না। তিনি গুণাহগারের তওবা[4] কবুল করিয়া থাকেন। যাহারা শাস্তির যোগ্য তাহাদিগকে শাস্তি দেন। তিনিই হেদায়ত করেন, অর্থাৎ যাহারা সৎপথে আছে তাহাদিগকে তিনিই সৎপথে রাখেন। দুনিয়াতে যাহাকিছু ঘটে, সমস্ত তাঁহারই হুকুমে এবং তাঁহারই কুদরতে ঘটিয়া থাকে। তাঁহার কুদরত এবং হুকুম ব্যতীত একটি বিন্দুও নড়িতে পারে না। তাঁহার নিদ্রাও নাই, তন্দ্রাও নাই। নিখিল বিশ্বের রক্ষণাবেক্ষণে তাঁহার একটুও কষ্ট বা ক্লান্তি বোধ হয় না। (তিনিই সমস্ত কিছু রক্ষা করিতেছেন।) ফলকথা, তাঁহার মধ্যে যাবতীয় সৎ ও মহৎ গুণ আছে এবং দোষ-ত্রুটির নামগন্ধও তাঁহার মধ্যে নাই। তিনি সমস্ত দোষ-ত্রুটি হইতে অতি পবিত্র। ৬। তাঁহার যাবতীয় গুণ অনাদিকাল হইতে আছে এবং চিরকালই থাকিবে। তাঁহার কোন গুণই বিলোপ বা কম হইতে পারে না। ৭। জ্বিন ও মানব ইত্যাদি সৃষ্টবস্তুর গুণাবলী হইতে আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র[5] কিন্তু কোরআন ও হাদীসের কোন কোন স্থান-যাহা আমাদের মধ্যে আছে তাহা আল্লাহ্রও আছে বলিয়া উল্লেখ আছে (যেমন, বলা হইয়াছে- আল্লাহর হাত) তথায় এই রকম ঈমান রাখা দরকার যে, ইহার প্রকৃত অর্থ আল্লাহই জানেন। আমরা বেশী বাড়াবাড়ি না করিয়া এই ঈমান এবং এক্বীন রাখিব যে, ইহার অর্থ আল্লাহর নিকট যাহাই হউক না কেন, তাহাই ঠিক এবং সত্য, তাহা আমাদের জ্ঞানের বাহিরে। এইরূপ ধারণা রাখাই ভাল। তবে কোন বড় মুহাক্কেক আলেম এরূপ শব্দের কোন সুসঙ্গত অর্থ বলিলে তাহাও গ্রহণ করা যাইতে পারে। কিন্তু ঐরূপ বলা সকলের কাজ নহে। যাহারা আল্লাহর খাছ বান্দা তাঁহারাই বলিতে পারেন; তাহাও শুধু তাঁহারই বুদ্ধি মত; নতুবা আসল এক্বীনী অর্থ আল্লাহ্ তায়ালাই জানেন। এইরূপ শব্দ বা কথা যাহা বুঝে আসে না, সেইগুলিকে ‘মুতাশাবেহাত‘ বলা হয়। ৮। সমগ্র দুনিয়ার ভালমন্দ যাহাকিছু হউক না কেন, সমস্তই আল্লাহ্ তায়ালা উহা হওয়ার পূর্বেই আদিকাল হইতে অবগত আছেন। তিনি যাহা যে-রূপ জানেন তাহা সেইরূপই পয়দা করেন ইহাকেই তক্বদীর বলে। আর মন্দ জিনিস পয়দা করার মধ্যে অনেক হিকমত নিহিত আছে। ইহা সকলে বুঝিতে পারে না। ৯। মানবকে আল্লাহ্ তায়ালা বুদ্ধি অর্থাৎ ভালমন্দ বিবেচনা শক্তি এবং (ভালমন্দ বিবেচনা করিয়া নিজ) ইচ্ছা (ও ক্ষমতায় কাজ করিবার শক্তি) দান করিয়াছেন। এই শক্তি দ্বারাই মানুষ সৎ, বা অসৎ, সওয়াব বা গুনাহ নিজ ক্ষমতায় করে; (কিন্তু কোনকিছু পয়দা করিবার ক্ষমতা মানুষকে দেওয়া হয় নাই।) গুণাহর কাজে আল্লাহ্ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন এবং নেক কাজে সন্তুষ্ট হন। ১০। আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে তাহাদের শক্তির বাহিরে কোন কাজ করিবার আদেশ করেন নাই। ১১। আল্লাহ্ তায়ালার উপর কোন কিছুই ওয়াজিব নহে। তিনি যাহাকিছু মেহেরবানী করিয়া করেন, সমস্তই শুধু তাঁহার কৃপা এবং অনুগ্রহ মাত্র। (কিছু বান্দাদের নেক কাজে যে সমস্ত সওয়াব নিজেই মেহেরবানী করিয়া দিতে চাহেন তাহা নিশ্চয়ই দিবেন, যেন তাহা ওয়াজিবেরই মত।) ১২। বহুসংখ্যক পয়গম্বর মানব এবং জ্বিন জাতিকে সৎপথ দেখাইবার জন্য আসিয়াছেন। তাঁহারা সকলেই নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁহাদের নির্দিষ্ট সংখ্যা আল্লাহ্ তায়ালাই জানেন; (আমাদিগকে তাহা বলা হয় নাই।) তাঁহাদের সত্যতার প্রমাণ (জনসাধারণকে) দেখাইবার জন্য তাঁহাদের দ্বারা এমন কতিপয় আশ্চর্য ও বিস্ময়কর কঠিন কঠিন কাজ প্রকাশ করা হইয়াছে যে, তাহা অন্য লোক করিতে পারে না। এই ধরণের কাজকে মোজেযা বলে। পয়গম্বরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন হযরত আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ ছিলেন আমাদের হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। অন্যান্য সব পয়গম্বর এই দুইজনের মধ্যবর্তী সময়ে অতীত হইয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে কোন কোন পয়গম্বরের নাম অনেক মশহূর; যেমন- হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইয়াকূব (আঃ),, হযরত ইউসুফ (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ), হযরত আইয়ুব (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত হারূন (আঃ), হযরত যাকারিয়া (আঃ), হযরত ইয়াহইয়া (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ), হযরত ইলইয়াস (আঃ), হযরত আল ইয়াছাআ (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ), হযরত লুৎ (আঃ), হযরত ইদ্রীস (আঃ), হযরত যুলকিফল (আঃ), হযরত ছালেহ (আঃ), হযরত হূদ (আঃ), হযরত শোআইব (আঃ)। ১৩। পয়গম্বরদের মোট সংখ্যা কত তাহা আল্লাহ্ তায়ালা কাহাকেও বলিয়া দেন নাই। অতএব, আল্লাহ্ তায়ালা যত পয়গম্বর পাঠাইয়াছেন, তাহা আমাদের জানা থাকুক বা না থাকুক সকলের উপরেই আমাদের ঈমান রাখিতে হইবে। অর্থাৎ, সকলকেই সত্য ও খাঁটি বলিয়া মান্য করিতে হইবে। যাঁহাদিগকে আল্লাহ্ তায়ালা পয়গম্বর করিয়া পাঠাইয়াছেন তাঁহারা নিশ্চয়ই পয়গম্বর, তাহাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই। ১৪। পয়গম্বরদের মধ্যে কাহারও মর্তবা কাহারও চেয়ে অধিক। সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মর্তবা আমাদের হুযুর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর। তাঁহার পর আর কোন নূতন পয়গম্বর কিয়ামত পর্যন্ত আসিবে না, আসিতে পারে না। কেন না কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ এবং জ্বিন সৃষ্ট হইবে, সকলের জন্যই তিনি পয়গম্বর। ১৫। আমাদের পয়গম্বর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় এক রাত্রে আল্লাহ্ তায়ালা মক্তা শরীফ হইতে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এবং তথা হইতে সাত আসমানের উপর এবং ততা হইতে সাত আসমানের উপর এবং তথা হইতে যে পর্যন্ত আল্লাহ্ তায়ালার মর্জি হইয়াছিল সে পর্যন্ত উঠাইয়া আবার মক্কা শরীফে পৌঁছাইয়া দিয়েছিলেন; ইহাকে মেরাজ শরীফ বলে। ১৬। আল্লাহ্ তায়ালা কিছুসংখ্যক জীব নূর দ্বারা পয়দা করিয়া তাহাদিগকে আমাদের চর্ম চক্ষুর আড়ালে রাখিয়াছেন। তাহাদিগকে ফিরিশতা বলে। অনেক কাজ তাঁহাদের উপর ন্যস্ত আছে। তাঁহারা কখনও আল্লাহর হুকুমের খেলাফ কোন কাজ করেন না। যে কাজে নিয়োজিত করিয়া দিয়াছেন সে কাজেই লিপ্ত আছেন। এই সমস্ত ফিরিশতার মধ্যে চারিজন ফিরিশতা অনেক মশহুর : (১) হযরত জিবরায়ীল (আঃ), (২) হযরত মীকায়ীল (আঃ), (৩) হযরত ইসরাফীল (আঃ), (৪) হযরত ইযরায়ীল (আৎ)। আল্লাহ্ তায়ালা আরও কিছুসংখ্যক জীব অগ্নি দ্বারা পয়দা করিয়াছেন, তাহাদিগকেও আমরা দেখিতে পাই না। ইহাদিগকে জ্বিন বলা হয়। ইহাদের মধ্যে ভাল-মন্দ, নেককার, বদকার সব রকমই আছে। ইহাদের ছেলেমেয়েও জন্মে। ইহাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মশহূর দুষ্ট বদমাআশ হইল-ইবলীস। ১৭। মুসলমান যখন অনেক এবাদত বন্দেগী করে, গুনাহর কাজ হইতে বাঁচিয়া থাকে, অন্তরে দুনিয়ার মহব্বত রাখে না এবং পয়গম্বর ছাহেবের পূর্ণ তাবেদারী করে, তখন সে আল্লাহর দোস্ত এবং খাছ পিয়ারা বান্দায় পরিণত হয়। এইরূপ ব্যক্তিকে আল্লাহর ওলী বলে। আল্লাহর ওলীদের দ্বারা সময় সময় এ রকম কাজ হইয়া থাকে, যাহা সাধারণ লোক দ্বারা হইতে পারে না, এই রকম কাজকে কারামত বলে। ১৮। ওলী যত বড়ই হউক না কে, কিন্তু নবীর সমান হইতে পারে না। ১৯। যত বড় ওলীই হউক না কেন, কিন্তু যে পর্যন্ত জ্ঞান বুদ্ধি ঠিক থাকে সে পর্যন্ত শরীঅতের পাবন্দী করা তাঁহার উপর ফরয। নামায, রোযা ইত্যাদি কোন এবাদতই তাহার জন্য মাফ হইতে পারে না। যে সকল কাজ শরীঅতে হারাম বলিয়া নির্ধারিত আছে তাহাও তাঁহার জন্য কখনও হালাল হইতে পারে না। ২০। শরীঅতের খেলাফ করিয়া কিছুতেই খোদার দোস্ত (ওলী) হওয়া যায় না।[6] এইরূপ খেলাফে শরআ (শরীঅত বিরোধী) লোক দ্বারা যদি কোন অদ্ভূদ ও অলৌকিক কাজ সম্পন্ন হইতে থাকে, তবে তাহা হয় যাদু, না হয় শয়তানের ধোঁকাবাজী। অতএব, এইরূপ লোককে কিছুতেই বুযুর্গ মনে করা উচিত নহে। ২১। আল্লাহর ওলীগণ কোন কোন ভেদের কথা স্বপ্নে বা জাগ্রত অবস্থায় জানিতে পারেন, ইহাকে কাশফ বা এলহাম বলে। যদি তাহা শরীঅত সম্মত হয়, তবে তাহা গ্রহণযোগ্য অন্যথায় গ্রহণযোগ্য নহে। ২২। আল্লাহ্ এবং রসূল কোরআন, হাদীসে দ্বীন (ধর্ম) সম্বন্ধীয় সমস্ত কথাই বলিয়া দিয়াছেন। এখন দ্বীন সম্পর্কে কোন নূতন কথা আবিষ্কার করা বৈধ নহে। এইরূপ (দ্বীন সম্বন্ধীয়) নূতন কথা আবিষ্কারকে বেদআত বলে; ইহা বড়ই গুনাহ। ২৩। পয়গম্বরগণ যাহাতে নিজ নিজ উম্মতদিগকে ধর্মের কথা শিক্ষা দিতে পারেন, সেই জন্য তাঁহাদের উপর আল্লাহ্ তায়ালা ছোট বড় অনেকগুলি আসমানী কিতাব জিবরায়ীল (আঃ) মারেফত নাযিল করিয়াছেন। তন্মধ্যে চারিখানা কিতাব অতি মশহূর- (১) তৌরাত- হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর (২) যাবূর- হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর (৩) ইঞ্জীল- হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর এবং (৪) কোরআন শরীফ- আমাদের পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল হইয়াছে। কোরআন শরীফই শেষ আসমানী কিতাব। কোরআনের পর আরি কোন কিতাব আল্লাহর তরফ হইতে নাযিল হইবে না। কিয়ামত পর্যন্ত কোরআন শরীফের হুকুমই চলিতে থাকিবে। অন্যান্য কিতাবগুলি গোমরাহ লোকেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করিয়া ফেলিয়াছে, কিন্তু কোরআন শরীফের হিফাযতের ভার স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই লইয়াছেন। অতএব, ইহাকে কেহই পরিবর্তন করিতে পারিবে না। ২৪। আমাদের পয়গম্বর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে সমস্ত মুসলমান দেখিয়াছেন তাঁহাদিগকে ছাহাবী বলা হয়। ছাহাবীদের অনেক বুযুর্গীর কথা কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে। তাঁহাদের সকলের সঙ্গেই মহব্বত এবং ভক্তি রাখা আবশ্যক। তাঁহাদের মধ্যে পরস্পর কলহ-বিবাদ যদি কিছু শোনা যায় তাহা ভুল-ত্রুটিবশতঃ হইয়াছে মনে করিতে হইবে; (কারণ, মানব মাত্রেরই ভুল-ত্রুটি হইয়া থাকে।) সুতরাং তাঁহাদের কাহাকেও নিন্দা করা যায় না। ছাহাবীদের মধ্যে চারজন ছাহাবী সবচেয়ে বড়। হযরত আবুবকর ছিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহু পয়গম্বর ছাহেবের পর তাঁহার প্রতিনিধি হিসাবে দ্বীন ইসলাম রক্ষার সুবন্দোবস্ত করেন, তাই তাঁহাকে প্রথম খলীফা বলা হয়। সমস্ত উম্মতে-মুহাম্মদীর তিনিই শীর্ষস্থানীয়। তারপর হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আহু দ্বিতীয় খলীফা হন। তারপর হযরত ওসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু তৃতীয় খলীফা হন, পরে হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু চতুর্থ খলীফা হইয়াছিলেন। ২৫। ছাহাবীদের মর্তবা এত উচ্চস্থানীয় যে, বড় হইতে বড় ওলীও ছোট হইতে ছোট ছাহাবীর সমতুল্য হইতে পারে না। ২৬। পয়গম্বর ছাহেবের সকল পুত্র-কন্যা এবং বিবি ছাহেবাগণের প্রতিও সম্মান ও ভক্তি করা আমাদের কর্তব্য। সন্তানের মধ্যে হযরত ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহার মর্তবা সর্বাপেক্ষা অধিক এবং বিবি ছাহেবানদের মধ্যে হযরত খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহা ও হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার মর্তবা সবচেয়ে বেশী। ২৭। আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূল যাহাকিচু বলিয়াছেন, সকল বিষয়কেই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করা এবং মানিয়া লওয়া ব্যতীত ঈমান ঠিক হইতে পারে না। কোন একটি কথায়ও সন্দেহ পোষণ করিলে বা মিথ্যা বলিয়া মনে করিলে বা কিছু দোষ-ত্রুটি ধরিলে বা কোন একটি কথা লইয়া ঠাট্টা-বিদ্রুপ করিলে মানুষ বে-ঈমান হইয়া যায়। ২৮। কোরআন হাদীসের স্পষ্ট অর্থ অমান্য করিয়া নিজের মত পোষণের জন্য ঘুরাইয়া ফিরাইয়া অন্য অর্থ গ্রহণ বদ-দ্বীনির কথা। ২৯। গুনাহকে হালাল জানিলে ঈমান থাকে না। ৩০। গুনাহ যত বড়ই হউক না কেন, যে পর্যন্ত উহা গুনাহ এবং অন্যায় বলিয়া স্বীকার করিতে থাকিবে, সে পর্যন্ত ঈমান একেবারে নষ্ট হইবে না, অবশ্য ক্ষীণ ও দুর্বল হইয়া পড়িবে। ৩১। যাহাদের অন্তরে আল্লাহ্ তায়ালার (আযাবের) ভয় কিংবা (রহমতের) আশা নাই-সে কাফির। ৩২। যে কাহারো কাছে গায়েবের কথা জিজ্ঞাসা করে এবং তাহাতে বিশ্বাস করে, সে কাফির। ৩৩। গায়েবের কথা এক আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত অপর কেহই অবগত নহে। হ্যাঁ, পয়গম্বর ছাহেবান ওহী মারফত, ওলীআল্লাহগণ কাশফ ও এলহাম মারফত এবং সাধারণ লোক লক্ষণ দ্বারা যে, কোন কোন কতা জানিতে পারেন তাহা গায়েব নহে। ৩৪। কাহাকেও নির্দিষ্ট করিয়া কাফির কিংবা এইরূপ বলা যে, নির্দিষ্টভাবে অমুকের উপর খোদার লানত হউক তাহা অতি বড় গুণাহ। তবে এইরূপ বলা যাইতে পারে যে, অত্যাচারীদের উপর খোদার লানত হউক। কিন্তু যাহাকে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূল কাফির বলিয়াছেন, তাহাকে (নির্দিষ্টভাবে) কাফির বলা যাইতে পারে। (যথা-ফিরআউন, বা অন্য যাহাকে তাঁহারা লানত করিয়াছেন তাহার উপর লানত করা।) ৩৫। মানবের মৃত্যুর পর (যদি কবর দেওয়া হয়, তবে কবর দেওয়ার পর আর যদি কবর দেওয়া না হয়, তবে যে অবস্থায়ই থাকুক সে অবস্থাতেই তখন) তাহার নিকট মুনকার এবং নকীর নামক দুইজন ফিরিশতা আসিয়া জিজ্ঞাসা করেন : তোমার মাবুদ কে? তোমার দ্বীন (ধর্ম) কি? এবং হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন যে, ইনি কে? যদি মুরদা ঈমানদার হয়, তবে তো ঠিক ঠিক জওয়াব দেয় অতঃপর খোদার পক্ষ হইতে তাহার জন্য সকল প্রকার আরামের ব্যবস্থা করিয়া দেওয়া হয়। বেহেশতের দিকে ছিদ্রপথ করিয়া দেওয়া হয়, তাহাতে সুশীতল বায়ু এবং নির্মল সুগন্ধ প্রবেশ করিতে থাকে, আর সে পরম সুখের নিদ্রায় ঘুমাইতে থাকে। আর মৃত ব্যক্তি ঈমানদার না হইলে, সে সকল প্রশ্নের জওয়াবেই বলে : আমি কিছুই জানি না, আমি কিছুই জানি না। অনন্তর তাহাকে কঠিন আযাব দেওয়া হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে এই কঠিন আযাব ভোগ করিতে থাকিবে। আর কোন বান্দাকে আল্লাহ্ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে এইরূপ পরীক্ষা হইতে অব্যাহতি দিয়া থাকেন; কিন্তু এই সকল ব্যাপার মৃত ব্যক্তিই জানিতে পারে, আমরা কিছুই অনুভব করিতে পারি না। যেমন নিদ্রিত ব্যক্তি স্বপ্নে অনেক কিছু দেখিতে পায়, আমরা জাগ্রত অবস্থায় তাহার নিকটে থাকিয়াও তাহা দেখিতে পাই না। ৩৬। মৃত ব্যক্তিকে প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় তাহার আসল ও স্থায়ী বাসস্থান দেখান হয়। যে বেহেশতী হইবে তাহাকে বেহেশত দেখাইয়া তাহার আনন্দ বর্ধন করা হয়, দোযখীকে দোযখ দেখাইয়া তাহার কষ্ট এবং অনুতাপ আরও বাড়াইয়া দেওয়া হয়। ৩৭। মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ বা কিছু দান খয়রাত করিয়া উহার সওয়াব তাহাকে বখশিয়া দিলে তাহা সে পায় এবং উহাতে তাহার বড়ই উপকার হয়। ৩৮। আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসূল কিয়ামতের যে সমস্ত আলামত বর্ণনা করিয়াছেন উহার সবগুলি নিশ্চয় ঘটিবে। ইমাম মাহদী (আঃ) আগমন করিবেন এবং অতি ন্যায়পরায়ণতার সহিত রাজত্ব করিবেন। কানা দাজ্জালের আবির্ভাব হইবে এবং দুনিয়ার মধ্যে বড় ফেৎনা ফাসাদ করিবে। হযরত ঈসা (আঃ) আসমান হইতে অবতীর্ণ হইয়া তাহাকে হত্যা করিবেন। ইয়াজুজ মাজুজ (এক জাতি) সমস্ত দুনিয়ায় ছড়াইয়া পড়িবে এবং সব তছনছ করিয়া ফেলিবে; অবশেষে খোদার গযবে ধ্বংস হইবে। এক অদ্ভূত জীব মাটি ভেদ করিয়া বাহির হইবে এবং মানুষের সহিত কথা বলিবে। সূর্য পশ্চিম দিক হইতে উদয় হইবে, (এবং পশ্চিম দিকেই অস্ত যাইবে।) কোরআন মজীদ উঠিয়া যাইবে এবং অল্প দিনের মধ্যে সমস্ত মুসলমান প্রাণ ত্যাগ করিবে। শুধু কাফিরই কাফির থাকিয়া যাইবে। (তাহাদের উপর কিয়ামত কায়েম হইবে।) এই রকম আরও অনেক আলামত আছে। ৩৯। যখন সমস্ত আলামত প্রকাশ হইয়া যাইবে, তখন হইতে কিয়ামতের আয়োজন শুরু হইবে। হযরত ইসরাফীল (আঃ) সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। (এই সিঙ্গা শিং-এর আকারের প্রকাণ্ড এক রকম জিনিস) সিঙ্গায় ফুঁক দিলে আসমান জমিন সমস্ত ফাটিয়া টুকরা টুকরা হইয়া যাইবে, যাবতীয় সৃষ্ট জীন মরিয়া যাইবে। আর যাহারা পূর্বে মারা গিয়াছিল তাহাদের রূহ বেহুশ হইয়া যাইবে; কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা যাহাকে বাঁচাইয়া রাখিতে চাহিবেন সে নিজের অবস্থায়ই থাকিবে। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত হইবে। ৪০। আবার যখন আল্লাহ্ তায়ালা সে সমস্ত আলম পুনর্বার সৃষ্টির ইচ্ছা করিবেন, তখন দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হইবে এবং সমস্ত আলম জীবিত হইয়া উঠিবে। সমস্ত মৃত লোক জীবিত হইয়া কিয়ামতের ময়দানে একত্র হইবে এবং ততাকার অসহনীয় কষ্ট সহ্য করিতে না পারিয়া সুপারিশ করাইবার জন্য পয়গম্বরদের কাছে যাইবে, কিন্তু সকলেই অক্ষমতা প্রকাশ করিবেন। পরিশেষে আমাদের পয়গম্বর ছাহেব আল্লাহ্ তায়ালার অনুমতি লইয়া সুপারিশ করিবেন। নেকী-বদি পরিমাপের পাল্লা (মীযান) স্থাপন করা হইবে। ভাল-মন্দ সমস্ত কর্মের পরিমাণ ঠিক করা হইবে এবং তাহার হিসাব হইবে। কেহ কেহ বিনা হিসাবে বেহেশতে যাইবে। নেককারদের আমলনামা তাঁহাদের ডান হাতে এবং গুনাহগারদের আমলনামা তাহাদের বাম হাতে দেওয়া হইবে। আমাদের পয়গম্বর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁহার (নেক) উম্মতকে হাওযে কাওছারের পানি পান করাইবেন। সেই পানি দুধ হইতেও সমধিক সাদা এবং মধু অপেক্ষা অধিক সুস্বাদু। সকলকে পুলছিরাত পার হইতে হইবে। নেককারগণ সহজে উহা পার হইয়া বেহেশতে পৌঁছিবেন, আর পাপীরা উহার হইতে দোযখের মধ্যে পড়িয়া যাইবে। ৪১। দোযখ এখনও বর্তমান আছে। তাহাতে সাপ, বিচ্ছু এবং আরও অনেক কঠিন কঠিন আযাবের ব্যবস্থা আছে। যাহাদের মধ্যে একটুকুও ঈমান থাকিবে, যতই গুনাহগার হউক না কেন, তাহারা নিজ নিজ গুনাহর পরিমাণ শাস্তি ভোগের পর নবীগণের এবং বুযুর্গদের সুপারিশে নাজাত পাইয়া বেহেশতে যাইবে। আর যাহাদের মধ্যে বিন্দুমাত্রও ঈমান নাই অর্থাৎ, যাহারা কাফির ও মুশরিক, তাহার চিরকাল দোযখের আযাবে নিমজ্জিত থাকিবে, তাহাদের মৃত্যুও হইবে না। ৪২। বেহেশতও এখন বিদ্যমান আছে। সেখানে অসংখ্য প্রকারের সুখ-শান্তি এবং আমোদ-প্রমোদের উপকরণ মৌজুদ রহিয়াছে। যাঁহারা বেহেশতী হইবেন কোন প্রকার ভয়-ভীতি বা কোন রকম চিন্তা-ভাবনা তাঁহাদের থাকিবে না। সেখানে তাঁহারা চিরকাল অবস্থান করিবেন। তাঁহাদিগকে কখনও তথা হইতে বহিষ্কার করা হইবে না; আর তাহাদের মৃত্যুও হইবে না। ৪৩। ছোট হইতে ছোট গুনাহর কারণেও আল্লাহ্ তায়ালা ইচ্ছা করিলে শাস্তি দিতে পারেন, আবার বড় হইতে বড় গুনাহও তিনি মাত্রও শাস্তি না দিয়া মেহেরবানী করিয়া নিজ রহমতে মাফ করিয়া দিতে পারেন। আল্লাহ্ তায়ালার সব কিছুরই ক্ষমতা আছে। ৪৪। শিরক এবং কুফরির গুনাহ আল্লাহ্ তায়ালা কাহাকেও মাফ করিবেন না; তদ্ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ আল্লাহ্ তায়ালা যাহাকে ইচ্ছা মাফ করিয়া দিবেন। তাঁহার কোন কাজে কেহ বাঁধা দিতে পারে না। ৪৫। আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁহার রসূল যাহাদের নাম উল্লেখ করিয়া বেহেশতী বলিয়াছেন তাঁহারা ব্যতীত অন্য কাহাকেও আমরা সুনিশ্চিতভাবে বেহেশতী হওয়া সাব্যস্ত করিতে পারি না। তবে নেক আলামত দেখিয়া (অর্থাৎ, আমল আখলাক ভাল হইলে) ভাল ধারণা এবং আল্লাহর রহমতের আশা করা কর্তব্য। ৪৬। বেহেশতে আরামের জন্য অসংখ্য নেয়ামত এবং অপার আনন্দের অগণিত সামগ্রী মওজুদ আছে। সর্বপ্রধান এবং সবচেয়ে অধিক আনন্দদায়ক নেয়ামত হইবে আল্লাহ্ তায়ালার দীদার (দর্শন) লাভ। বেহেশতীদের ভাগ্যে এই নেয়ামত জুটিবে। এই নেয়ামতের তুলনায় অন্যান্য নেয়ামত কিছুই নয় বলিয়া মনে হইবে। ৪৭। জাগ্রত অবস্থায় চর্ম-চক্ষে এই দুনিয়ায় কেহই আল্লাহ্ তায়ালাকে দেখে নাই, দেখিতে পারেও না। (অবশ্য বেহেশতীরা বেহেশতে দেখিতে পাইবে)। ৪৮। সারাজীবন যে যে-রূপই হুক না কেন, কিন্তু খাতেমা (অন্তিমকাল) হিসাবেই ভালমন্দের বিচার হইবে। যাহার খাতেমা ভাল হইবে সে-ই ভাল এবং সে পুরস্কারও পাইবে ভাল, আর যাহার খাতেমা মন্দ হইবে (অর্থাৎ, বে-ঈমান হইয়া মরিবে) সে-ই মন্দ এবং তাহাকে ফলও ভোগ করিতে হইবে মন্দ। ৪৯। সারা জীবনের মধ্যে মানুষ যখনই তওবা[7] করুক বা ঈমান আনুক না কেন, আল্লাহ্ তায়ালা তাহা কবূল করেন, কিন্তু মৃত্যুকালে যখন প্রাণ বাহির হইতে থাকে এবং আযাবের ফেরেশতাকে নজরে দেখিতে পায়, তখন অবশ্য তওবাও কবূল হয় না এবং ঈমানও কবূল হয় না। ঈমান এবং আক্বায়েদের পর কিছু খারাব আক্বীদা ও খারাব প্রথা এবং কিছুসংখ্যক বড় বড় গুনাহ যাহা প্রায়ই ঘটিয়া থাকে এবং যাহার কারণে ঈমানে নোকছান আসিয়া পড়ে তাহা বর্ণনা করা যুক্তিসঙ্গত মনে করি, যেন জনগণ সে-সব হইতে বাঁচিয়া থাকিতে পারে। ইহার মধ্যে কোনটি ত একেবারেই কুফর ও শিরকমুলক, কোনটি প্রায়ই কুফর ও শিরকমূলক, কোনটি বেদআত এবং গোমরাহী, আর কোনটি শুধু গুনাহ। মোটকথা, ইহার সবগুলি হইতেই বাঁচিয়া থাকা একান্ত আবশ্যক। আবার যখন এইগুলির বর্ণনা শেষ হইবে, তখন গুনাহ করিলে দুনিয়াতেই যে-সব ক্ষতি হয় এবং নেক কাজ করিলে দুনিয়াতেই যে-সব লাভ হয় তাহা সংক্ষেপে বর্ণিত হইবে। কারণ, মানুষ সাধারণতঃ দুনিয়ার লাভ-লোকসানের দিকেই বেশী লক্ষ্য করিয়া থাকে, তাই হয়ত কেহ এই ধারণায়ও কোন নেক কাজ করিতে পারে বা কোন গুনাহ হইতে দূরে থাকিতে পারে।

The unbliveable rules or অদ্ভূত কইন

অদ্ভুত আইন ১| রাশিয়াতে পিটার দ্য গ্রেটের শাসনকালে কেউ যদি দাঁড়ি রাখতে চাইতো তাকে আলাদাভাবে কর প্রদান করতে হতো দাঁড়ির উপর। ২| যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনও বিয়ারের বিজ্ঞাপনে বিয়ার পানরত অবস্থায় কোনও মানুষকে দেখানো যায়না। ৩| আলাস্কার আইন অনুসারে কোনও উড়োজাহাজ থেকে মুজের(এক ধরনের বড় হরিণ) দিকে তাকানো বেআইনী। ৪| ক্যালিফোর্নিয়ান আইন অনুসারে কোনও মহিলা বাথরোব পড়ে গাড়ি চালাতে পারবেনা। ৫| ইংল্যান্ডের আইন অনুসারে কৃষকেরা তাদের খামারের শূকরদেরকে খেলনা দিতে বাধ্য থাকবে। ৬| ১৯৬৯ সালে মাসাচুসেটসে ক্রিসমাস পালন করা বেআইনি ছিল। ৭| প্রাচীন ইংল্যান্ডে কোনও নারীর সাথে সঙ্গম করতে চাইলে রাজার অনুমতি নেবার দরকার পড়ত। ৮| এথেন্সের পুলিশ কোনও গাড়ির চালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেবার ক্ষমতা রাখে যদি ঐ চালক গোসল না করে গাড়ি চালায় অথবা চালকের বেশভূষা না ঠিক থাকে। ৯| বাংলাদেশে ১৫ বছরের শিশুকেও জেলে ভরে দেবার আইন আছে যদি সে পরীক্ষার খাতায় নকল করে। ১০| ফ্লোরিডায় ঘোড়া চুরি করার শাস্তি হচ্ছে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড। ১১| ফ্রান্সে কোনও মৃত ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে সেক্ষেত্রে আইনগতভাবে কোনও বাঁধা নেই। ১২| মায়ামিতে কোনো পশুর অনুকরণ করা আইনগত ভাবে নিষেধ ১৩| সান সালভেদরে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর শাস্তি হচ্ছে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড। ১৪| জ্যাক ড্যানিয়েল হুইস্কি যে শহরে উৎপাদন করা হয় সেখানে এই হুইস্কি সেবন এবং বেচাকেনা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ১৫| সাংহাই, চায়নাতে লাল রঙের গাড়ি কেনা এবং মালিকানায় রাখা আইনবিরুদ্ধ। ১৬| মস্কোতে আবহাওয়াবিদরা ভুল তথ্য প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। ১৭| ইন্দোনেশিয়াতে হস্তমৈথুনের শাস্তি হচ্ছে ধর থেকে মাথা কেটে ফেলে মৃত্যুদণ্ড। ১৮| আইসল্যান্ডে রেস্তোরায় গিয়ে বকশিস দেওয়াটাকে অসম্মানজনক মনে করা হয়। ১৯| ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কোনও লম্বা চুলের অধিকারী পুরুষের ডিজনিল্যান্ডের ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিলনা। ২০| নিউজিল্যান্ডে সর্বপ্রথম মহিলাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ২১। অস্ট্রেলিয়াতে বাচ্চারা সিগারেট কিনতে পারবে না!! কারণ এটা আইনবিরোধী!! কিন্তু সিগারেট খেতে/টানতে পারবে!! এতে কোনো বাধা নেই!! ২২। ইংল্যান্ডে টেলিভিশন ব্যাবহার করার জন্য লাইসেন্স করতে হয়!! (একটু কনফিউশন আছে।। ইংল্যান্ডে যারা আছেন তারা কি বলতে পারবেন ঘটনা সত্য কিনা??) ২৩। থাইল্যান্ডে গাড়ি চালানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে শার্ট পড়তে হবে!! অর্থাৎ, আপনি খালি গায়ে গাড়ি চালাতে পারবেন না!! ২৪। আমেরিকার ফ্লোরিডাতে আপনি যদি পার্কিং স্পটে কোনো হাতি বেঁধে রাখেন, তবে আপনাকে সেই হাতির জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে!! ২৫। বিস্ময়কর একটা আইন জানাচ্ছি এইবার!! আমেরিকার নিউইয়র্কে কোনো উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড!! (অর্থাৎ, কেউ লাফিয়ে পড়ে যদি বেঁচে যায় তবে তাকে সুস্থ করে বাঁচিয়ে তুলে এরপর আবার মেরে ফেলা হবে!!) Reference: http://www.sachalayatan.com/bhuter_baccha/25280