Popular posts

Friday 16 February 2018

রক্ত শীতল করা অমানবিক কিছু সামরিক প্রশিক্ষ



প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার কিছু ব্রত থাকে। কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারী/বেসরকারি চাকরি অথবা ব্যবসার মাধ্যমে নিজ জীবনের সাফল্য হেতু দেশের উন্নয়ন সাধনে প্রয়াস করে থাকেন, আবার অনেকে দেশ রক্ষার গুরু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে জন্মভূমির সেবক ও রক্ষক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করে থাকেন। দেশসেবার জন্য নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ থেকে সামরিক সদস্য হিসেবে রুপান্তরের পথটা কখনোই তেমন সহজ ছিল না। দড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া, বুকে ভর দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, কাদা পানির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে অগ্রসর হওয়া সহ নানা রকম প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া দেখে থাকি বা এসব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আমরা।

এ তো গেল সাধারণ প্রশিক্ষণের কথা, বিশ্বে এমন কিছু সামরিক বাহিনী রয়েছে যেখানে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলে পার করতে হয় এক অমানবিক প্রশিক্ষণ পর্ব। দেশমাতার সুরক্ষার্থে কিছু মানুষ সেই অমানবিক ও অসহনীয় অধ্যায়ের পর্বগুলো একে একে পার করে নিজেকে বিশ্ব সেরা লড়াকু সৈন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে থাকেন। আসুন জেনে নেয়া যাক রক্ত শীতল করা সেই প্রশিক্ষণ পর্বগুলো সম্পর্কে।

স্পেটসনাজ বাহিনী

Source: russian-sales.com

প্রথমেই বলতে হয় রাশিয়ার স্পেটসনাজ বাহিনীর কথা। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভীক সৈন্য হিসেবে তাদের গণ্য করা হয়। প্রশিক্ষণের সময় তাদের সম্ভাব্য সকল ধরনের অসহনীয় পীড়াদায়ক কাজ দেয়া হয়ে থাকে, যাতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কোনো আঘাত যেন তাদেরকে দুর্বল করতে বা পিছু হটাতে বাধ্য না করে।

স্পেটসনাজ বাহিনী; Source: usshunkalphateam.deviantart.com

কাঁটাতার ভর্তি পুকুর সাঁতরে পার হওয়া বা ট্রাকের পিছনের তাকে বেঁধে দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলো ট্রেনিং এর তালিকায় রয়েছে। শুধুই কী তা-ই! চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে বেসবল ব্যাট দিয়ে ধুন্ধুমার পিটুনি দেয়ার মতো অমানবিক সব প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও রয়েছে।

কাইবিলস

Source: imgrum.org

গুয়াতেমালার বিশেষ সামরিক বাহিনী কাইবিলস। সামরিক যুদ্ধের পাশাপাশি জঙ্গল যুদ্ধ ও জঙ্গী বিদ্রোহ অপারেশনে এই বাহিনী বিশেষ পারদর্শী। বছরে দু’বার নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। সামরিক ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। নিয়োগ প্রশিক্ষণে প্রায় ৬০ জনকে সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে এবং অবিশ্বাস্যভাবে কেবলমাত্র ১০ জন বা কখনো ৮ জনের অধিক কখনোই সেই পরীক্ষা পর্বে উত্তীর্ণ হতে পারে না। পুরো দুই মাস জুড়ে তাদের নির্মম প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে থাকে যে, তা একজন সৈন্যের মানসিক ও শারীরিক স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসকে পুরোপুরিভাবে গুঁড়িয়ে দিয়ে এক নতুন বিশ্বাসের আলোকে গড়ে তোলে।

কাইবিলস; Source: 2ndmaw.marines.mil

প্রশিক্ষণের ধরণ অনেকটা এমন– বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে কাঁটা ছড়িয়ে দেয়ার পর পুরো জায়গা জুড়ে অর্ধনগ্ন হয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার জন্য সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের শরীর আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায় এবং কাঁটা বিঁধতে থাকে অনবরত। অসহনীয়তার কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে নির্দেশ মোতাবেক তাদের নিজেদেরকেই নিজেদের মেডিক্যাল সেবা দিতে হয়। আমরা প্রায় সময় বলে থাকি মানুষের জীবন কণ্টকময়, কিন্তু এই প্রশিক্ষণে মানুষের শরীর কন্টকাবৃত হয়ে যায়। শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের সহনীয়তার মাত্রাকে এক চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ‘দ্য ইনফার্নো’ নামের একটি পরীক্ষা নেয়া হয়। এ পরীক্ষায় সৈন্যদেরকে টানা দুদিন আকন্ঠ পানিতে ডুবে থাকতে হয় এবং সম্পূর্ণ নির্ঘুম অবস্থায়।

এবার আসি মানসিক সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের কথায়। প্রশিক্ষণের শুরুতেই প্রত্যককে একটি করে কুকুর ছানা দেয়া হয়। নির্দেশনাটা অনেকটা এরকম– দু’মাস যাবত কুকুর ছানাকে যত্ন আত্তি করতে হবে এবং ট্রেনিংয়ের শেষপর্যায়ে এসে পালিত এই কুকুরটিকে মেরে ফেলতে হবে। এখানেই শেষ নয়, মেরে ফেলার পর তার মাংস ভক্ষণ করতে হবে। বিষয়টি প্রচন্ড রকমের অমানবিক। কিন্তু এ থেকে সৈন্যদের এটাই শেখানো হয় যে, যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকাটাই মুখ্য আর এজন্য যা করণীয় তা-ই করা উচিত।

কমান্ডো হুবার্ট

Source: gasimli.info

চিত্রশিল্প ও ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত শহর ফ্রান্সে রয়েছে দুর্ধর্ষ এক বাহিনী, কমান্ডো হুবার্ট। সমুদ্রের নিচে দাপিয়ে বেড়ানো কিছু অকুতোভয় ডাইভারকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই বাহিনী। প্রায় ১২ জন দক্ষ সামরিক ডাইভারকে নিয়ে ২৭ সপ্তাহের যাত্রাপথে মোট ১৭টি ধাপে একজন সাধারণ মানুষকে পুরোপুরি দুমড়ে মুচড়ে এক নতুন মানুষে রুপান্তরিত করা হয়। যার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়, সামনের সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে সুনির্দিষ্ট কার্য সমাধা করা। এদেরকে বলা হয় ফ্রগম্যান।

কমান্ডো হুবার্ট; Source:tech.wp.pl

প্রশিক্ষণ চলাকালে তাদেরকে দিক ঠিক রেখে অন্ধকার পানির নিচে দীর্ঘসময় সাঁতার কাটতে হয়। বিভিন্ন জাহাজে অতর্কিতে সফলভাবে হামলা করা এবং নীরবে বিস্ফোরক পুঁতে রেখে আসার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি প্রকৃত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় এবং একজন সৈন্যকে কোনোভাবেই ধরা পড়া যাবে না। যদি সে ধরা পড়ে যায় বা কোনো এক পর্যায়ে একটি ছোটখাটো ভুল করে ফেলে, তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ বাদ দিয়ে দেয়া হয়।

স্টর্ম কর্পস

উত্তর কোরিয়ার এক শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নাম স্টর্ম কর্পস। স্টর্ম কর্পসের প্রতিটি সদস্যকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে তারা প্রত্যেকে দশজন অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষকে অনায়াসে কুপোকাত করে ফেলতে পারে। আর এজন্য তাদের দুটি হাতই যথেষ্ট। একজন সৈন্যকে এভাবে তৈরি করতে হলে নিরন্তর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

স্টর্ম কর্পস; Source: entertales.com

প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রত্যেক সৈন্যকে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি গাছকে মোটা রশি দিয়ে আবৃত করে দেয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক প্রত্যেককে ৫,০০০ বার করে রশি আবৃত এই গাছে অনবরত ঘুষি মেরে নিজেদের হাত শক্ত করতে হয়। এরপর শুরু হয় ভাঙ্গা-চোরা বড় বড় টিনের কৌটায় ঘুষি মেরে নিজের হাত রক্তাক্ত করার পালা এবং সবশেষে রক্তাক্ত অবস্থায় লবণের ঢিবিতে ঘুষি মেরে মেরে সহ্য শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া। শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হাত পাকিয়ে নিতে এমন প্রশিক্ষণের বিকল্প হয়তো আর কিছুই হয় না।

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স; Source: ribalych.ru

বেলারুশ স্পেশাল ফোর্স, বেলারুশের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী যেখানে প্রত্যেকটি সৈন্যকে আগুনের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয়। বিপদসংকুল ও ভয়াবহ প্রশিক্ষণ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একেকজন সদস্যকে। জ্বলন্ত আগুনের মাঝে পুড়তে থাকা টায়ারের ওপর দিয়ে দৌড়ে যেতে হয় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। শরীরের চামড়া দগ্ধ হতে থাকে, কিন্তু এক কদম পিছনে ফেরার কোনো উপায় নেই। এমনটা করলে মুহূর্তেই প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে। গনগনে আগুনের মধ্যে থাকা যেকোনো কংক্রিটের ব্লককে মাথা দিয়ে ভেঙে ফেলার মতো বিপদসংকুল কাজেও দক্ষতা তৈরি করে ফেলতে হয়।

ফোর্স ব্রিগেড বাহিনী

ফোর্স ব্রিগেড বাহিনী; Source: craveonline.com

বিশ্বের দুরূহ সামরিক বাছাইপর্বের একটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্স ব্রিগেড বাহিনীর বাছাই এবং প্রশিক্ষণ পর্ব। সম্পূর্ণ অনাহারে এবং নির্ঘুম থেকে শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরে যুদ্ধে কিভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে এই বাহিনীর সদস্যদের। প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৈন্যদের সম্পূর্ণ অনাহারে এবং নির্ঘুম রাখা হয়। মুহূর্তের জন্যও ঘুমের কাছে পরাস্ত হওয়া চলবে না। এই পরিস্থিতির মেয়াদকাল ১-৭ দিন পর্যন্তও হতে পারে। তবে ৭ দিন মেয়াদকাল হলে ৫ম দিনে তাদের কিছু খাদ্য সরবরাহ করা হয়। কখনো আবার রাতের বেলা গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় এবং এ অবস্থায় একজন সৈন্য ঘুমাতে পারবে। হাতে গোনা খুব কম সংখ্যক লোকই পারে এই সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফোর্স ব্রিগেড বাহিনীর একজন সদস্য হতে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্স

দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্স; Source: storypick.com

একজন সৈন্যের কাছে শীত-গ্রীষ্মের কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয় এবং যেকোনো পরিবেশে যেকোনো অবস্থায় দেশের হয়ে লড়তে হবে– এমনটা বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা প্রায় -৩০° সেলসিয়াস আবহাওয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বরফাবৃত এলাকা পিয়ংচ্যাং এ। প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় বরফের ওপর দিয়ে বুকে ভর করে চলতে হয় এবং তাদের হাত দুটো পিছনে বেঁধে দেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এভাবে করে বুকে ভর দিয়ে চলতে হয়। অতঃপর নির্দেশ মোতাবেক উদম গায়ে সৈন্যদের একে অন্যের গায়ে বরফের টুকরো ছোড়াছুঁড়ি করতে হয় এবং কুস্তি খেলার আয়োজনও থাকে। এমন তাপমাত্রায় যেখানে সাধারণ মানুষ গায়ে ৫/৬টি মোটা শীতের কাপড় জড়িয়ে ঘরের বাইরে বের হয়, সেখানে খালি গায়ে এমন কার্য সম্পাদন সাধারণ মানুষের কর্ম নয়। প্রশিক্ষণ চলাকালে অনেকে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রশিক্ষণ ময়দান ছাড়তে বাধ্য হন।

ফিচার

Sunday 11 February 2018

সার্জেন্ট স্টাবি: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পদক পাওয়া কুকুর





 


১৯১৭ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে একটি ছোট্ট কুকুরছানা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে প্রাইভেট রবার্ট জুনিয়র কনরয় সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তিনি একসময় এই ছোট্ট কুকুরছানাটিকে দেখতে পান। কুকুরছানাটি এমনিতেই ছিল আকারে ছোট, তার উপর তার লেজটি তুলনামূলকভাবে আরো ছোট। এটা দেখে কনরয় বাচ্চা কুকুরটির নাম দেন স্টাবি।

তারপর তিনি স্টাবিকে নিজের ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। যদিও ক্যাম্পে যেকোনো প্রকার পোষাপ্রাণী রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল তবুও স্টাবিকে দেখে এবং তার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে সবাই তাকে নিজেদের সাথে রাখার মত প্রকাশ করে। সেনাদের সাথে বসবাস শুরু করার পাশাপাশি চতুর স্টাবি নিজেও বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নেয়াও শুরু করেছিলো। প্রথমে নিজের পায়ের থাবা উঠিয়ে স্যালুট করা শিখেছিলো সে। বাগল কল এবং সেনাদের মার্চিং রুটিনের সাথেও সে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো। স্টাবির দ্রুত সবকিছু শিখে নেয়া এবং যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার গুণ দেখে ক্যাম্পের সেনা সদস্যেরা নিশ্চিত ছিল যে, স্টাবিকে যুদ্ধ ময়দানে নিয়ে গেলেও সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। তাই কমান্ডিং অফিসারের নজর এড়িয়েই স্টাবি বেশ বহাল তবিয়তেই সেনাদের সাথে বসবাস করছিলো। পরে স্টাবি ১০২তম ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়ন এর একপ্রকার মাস্কটে পরিণত হয়।


যুদ্ধক্ষেত্রে পোষাপ্রাণী আনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কনরয় প্রচলিত কিছু বিধিনিষেধ ভেঙ্গে স্টাবিকে লুকিয়ে জাহাজে তোলেন। জাহাজে উঠিয়ে তিনি স্টাবিকে একটি কয়লার পাত্রে লুকিয়ে রাখেন। জাহাজ যখন সাগরে প্রবেশ করে তখন তিনি স্টাবিকে বের করেন। উপস্থিত পরিচিত সেনারা স্টাবিকে দেখে বেশ খুশি হয়। অপরিচিতরা তৎক্ষণাৎ তাকে আপন করে নেয়। কিন্তু সেখানকার কমান্ডিং অফিসার স্টাবিকে আবিষ্কার করার পর মোটেও খুশি হতে পারেননি। চতুর স্টাবি হয়তো কমান্ডিং অফিসারের চেহারা ও ভাবভঙ্গী দেখে বিপদের আঁচ পেয়েছিল। তাই সে তখনই তার সামনের পা তুলে একটি স্যালুট দিয়ে দিলো! একটি কুকুরের কাছ থেকে এমন স্যালুট পেয়ে কমান্ডিং অফিসারটা যারপরনাই অবাক এবং অভিভূত হয়েছিলেন। ফলে তিনিও স্টাবিকে সঙ্গে রাখার অনুমিত দিয়ে দেন সাথেসাথেই।

সার্জেন্ট স্টাবি; Source: stubbysdogwash.com

১৯১৮ সালের ৫ মে, ১০২তম ব্যাটেলিয়ন ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়। সেনারা যুদ্ধে নেমে পড়ে এবং স্টাবি তাদের সাথে থেকে যুদ্ধের গোলাগুলির আওয়াজ এবং বিস্ফোরণের সাথে পরিচিত হতে থাকে এবং নিজেকে দ্রুত মানিয়েও নেয়। এরই মাঝে স্টাবি তার প্রথম আঘাতটা পায়। বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করার ফলে তাকে তার অন্যান্য দোপেয়ে সেনাসাথীদের সাথে হাসপাতলে ভর্তি হতে হয়। সে দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠে এবং বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণের ফলে সে এরপর থেকে যেকোনো সন্দেহমূলক গ্যাসের গন্ধে সংবেদনশীল হয়ে উঠে। তার এই গন্ধে সংবেদনশীলতাই পরবর্তীতে বেশ উপকারে আসে। কারণ কিছুদিন পরেই এক ভোরবেলায় যখন নিজেদের পরিখায় অধিকাংশ সেনারা ঘুমে, তখন জার্মানি বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে আক্রমণ করে। স্টাবি সন্দেহজনক গ্যাসের গন্ধটি দ্রুত বুঝতে পারে এবং উচ্চস্বরে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। সে ঘুমন্ত সেনাদের জামা এবং জুতো কামড়ে ধরে টানাটানি শুরু করে। এতে অধিকাংশ সেনারাই ঘুম থেকে উঠে পড়ে এবং তারা বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপারটি বুঝতে পারে ও সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়।

গ্যাস মাস্ক পরা অবস্থায়; Source: slate.com

স্টাবির নাকই যে শুধু সেনাদের কাজে এসেছে তা কিন্তু নয়। স্টাবি তার কান দিয়েও অনেক সাহায্য করেছে। স্টাবি শত্রুদের তৈরি পরিখা নিজে নিজেই পার হতে পারতো এবং আহত মিত্র সেনাদের খুঁজে বের করতে পারতো। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যার কারণে সে আমেরিকান এবং জার্মান সেনাদের এবং তাদের ভাষা আলাদা করে চিনতে ও বুঝতে পারতো। যার ফলে স্টাবি ইংরেজি ভাষায় চিৎকার করা আহত সেনাদের খুঁজে বের করে সেখানে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতো যতক্ষণ না কোনো প্যারামেডিক আসতো। এমনকি স্টাবি আগত কামানের গোলার শব্দও যেকোনো মানুষের আগেই শুনতে পেতো। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করতো এবং আশেপাশের সেনারা সেই কামানের গোলার ব্যাপারে আগেই সতর্ক হয়ে যেতে পারতো।

নিজের কোট গায়ে স্টাবি; Source: ct.gov

এমনকি একবার স্টাবি এক জার্মান গুপ্তচরও ধরেছিল। একদিন স্টাবি একটি ঝোপের ভেতরে কিছু শব্দ শুনতে পায় এবং সেটা যাচাই করতে এগিয়ে যায়। সেই ঝোপে লুকিয়ে ছিল একজন জার্মান গুপ্তচর। গুপ্তচরটি আমেরিকান সেনাদের তৈরি পরিখাগুলো যাচাই করছিলো এবং চিত্র এঁকে নিচ্ছিলো। স্টাবি সেই ঝোপের ভেতরে এগিয়ে গেলে গুপ্তচরটি স্টাবিকে দেখতে পায় এবং জার্মান ভাষায় তাকে ডাক দেয়। স্টাবি সাথে সাথে বুঝতে পারে এটা শত্রুদের ভাষা। ফলে সে দ্রুত ছুটে যায় গুপ্তচরটির দিকে এবং আক্রমণ করে।

গুপ্তচরটি পড়িমরি করে দৌড় দেয়, কিন্তু স্টাবিও তাকে ধাওয়া করতে শুরু করে। স্টাবি তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে এবং তার পা কামড়ে ধরে। গুপ্তচরটি মাটিতে পড়ে যায় এবং স্টাবি তার হাত কামড়াতে শুরু করে দেয়। আমেরিকান সৈন্যরা না আসা পর্যন্ত এভাবে স্টাবি তাকে সেই জায়গাতেই আটকে ধরে রাখে। একসময় সেনারা আসে এবং গুপ্তচরটি ধরা পড়ে। এই ঘটনার পর স্টাবির পদোন্নতি হয় এবং তাকে সার্জেন্ট উপাধি দেয়া হয়। স্টাবিই ছিল আমেরিকার প্রথম কুকুর যে সার্জেন্ট হিসেবে পদমর্যাদা পেয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, সে তার মালিক অর্থাৎ কনরয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল পদমর্যাদায়।

যুদ্ধ থেকে স্টাবি যে বহালতবিয়তেই ফেরত এসেছে তা কিন্তু নয়। সেই বিষাক্ত গ্যাস ঘটনার পাশাপাশি সে একবার তার বুক এবং পায়ে শার্পনেলের আঘাতও পেয়েছিলো। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পুনরায় পরিপূর্ণ সুস্থ্ হয়ে উঠে সে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সে মাঝে মাঝে অন্যান্য আহত সেনাদের কাছেও যেতো এবং সেনারা তার সান্নিধ্য বেশ উপভোগও করতো।

সামরিক প্যারেড স্টাবি; Source: slate.com

সেই যুদ্ধে স্টাবি মোট ১৭ বার অংশগ্রহণ করেছিলো। যুদ্ধ শেষে তাকে আবারও লুকিয়ে জাহাজে করে ফেরত আনতে হয়েছিল। কারণ জাহাজে কুকুর নেয়ার অনুমতি ছিল না। আমেরিকায় পদার্পণের পর স্টাবি রীতিমত তারকায় পরিণত হয়। আর হবেই বা না কেন; সে বিশ্বস্ততার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং অনেক সেনার জীবন বাঁচিয়েছে, যার ফলে প্রচুর পদকও পেয়েছে সে। স্টাবি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের সাথে সাক্ষাৎ করেছে, দুইবার হোয়াইট হাউজ ভ্রমণ করেছে এবং কয়েকবার সামরিক প্যারেডে অংশও নিয়েছে।

তার কিছুদিন পর স্টাবি এবং কনরয় জর্জটাউনে বসবাস করা শুরু করে। কনরয় আইন পড়া শুরু করেন এবং স্টাবিকে জর্জটাউন ফুটবল দলের মাস্কট বানানো হয়। ফুটবল খেলার অর্ধসময়ের বিরতিতে স্টাবি মাঝে মাঝে মাঠে প্রবেশ করতো এবং মাঠে রাখা ফুটবলের সাথে খেলা করে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দিতো।

১৯২৬ সালে ৯/১০ বছর বয়সে স্টাবি মারা যায়। মৃত্যুর পর তার দেহ স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটে দান করা হয়। সেখানে তার অর্জিত পদকগুলোসহ তার দেহ সংরক্ষণ করে রাখা আছে।

অর্জিত পদকসহ স্টাবি; Source: ripleys.com

স্টাবি যে পদকগুলো পেয়েছিলো তা হলো,

তিনটি সার্ভিস স্ট্রাইপইয়াংকি ডিভিশন YD প্যাচফ্রেঞ্চ মেডেলফার্স্ট এনুয়াল আমেরিকান লিজিওন কনভেনশন মেডেলনিউ হেভেন WW1 ভেটেরানস মেডেলরিপাবলিক অব ফ্রান্স গ্রান্দে ওয়ার মেডেলসেইন্ট মিহিয়েল ক্যাম্পেইন মেডেলপার্পল হার্টচেতিয়াউ থিয়েরি ক্যাম্পেইন মেডেল

ফিচার ইমেজ: argunners.com

 

Saturday 10 February 2018

ফ্লামিংগ পাখির অভয়ারণ্য লবণাক্ত ও ক্ষারীয় হ্রদঃ “নাট্রন হ্রদ”

প্রকৃতি বরাবরের মতোই বিস্ময় জাগানিয়ার জন্ম দেয় প্রতিনিয়ত এবং তাঁরই কিছু নমুনা আমাদের চোখে ধরা পড়ে যার অনেক কিছুই আমাদের কাছে নাটকীয় মনে হয়। তেমনই এক বিস্ময়কর সৃষ্টি হলো কেনিয়া সীমানার কাছাকাছি উত্তর তাঞ্জানিয়ার আউশ অঞ্চলে অবস্থিত একটি লবণ ও খনিজ সোডাসমৃদ্ধ “নাট্রন হ্রদ” (Lake Natron) যার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে কেউ সংস্পর্শে গেলে বা সাতার কাটলে খুব অল্প সময়েই মাত্রাতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত লবণের ক্রিয়ায় মৃত্যু অনিবার্যিত। যার কারণে উক্ত লেকে সাতার কাঁটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেনো এতোটা বিপদজনক এই ক্ষারযুক্ত লবণ তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জানানো যায়, শুষ্ক মৌসুমে যখন হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় তখনই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে লবণাক্ততার মাত্রা। এ সময়ে হ্রদটির জলের গভীর অংশটুকু লাল বর্ণের এবং অগভীর অংশটুকু থাকে কমলা বর্ণের যার কারণ হলো “হ্যালোফিল” নামক এক প্রকার জীবাণু। এই হ্যালোফিল ক্ষারযুক্ত লবণের উপরে জন্মানো একপ্রকার সুগন্ধি ফুল উদ্ভিদের সাথে উৎপন্ন করে সাইনোব্যাক্টেরিয়া যা উদ্ভিদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এই হ্রদটির উপরের আবরণ ক্ষারযুক্ত লবণের দ্বারা তৈরি এবং প্রায় লাল বা গোলাপী রঙের হয়। বলাবাহুল্য, এই হ্রদটির ক্ষারযুক্ত লবণের আস্তরণ এতোটাই বিপদজনক যে এর সংস্পর্শে আসা প্রাণী মুহূর্তেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাছাড়া এই লেকের ভূপৃষ্ঠ হতে নির্গত হয় শক্তিশালী বিষাক্ত গ্যাস “হাইড্রোজেন সালফাইড”যাকে আমরা চিনি লাফিং গ্যাস নামে। এই গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় মানুষ অতিমাত্রায় হাসতে হাসতে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে।

নাট্রন হ্রদ
Source: InspirationSeek.com

কথা হচ্ছিলো পৃথিবীর প্রায় ৭৫ ভাগ ফ্লামিংগের (পাখিবিশেষ) জন্মস্থান এই নাট্রন হ্রদকে নিয়ে, যার আয়তন প্রায় ১০৪০ বর্গ কিঃমিঃ এবং উচ্চতা ৬০০ মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এবং জলের স্তরের উপর নির্ভর করে এর প্রশস্ততার বিস্তার ঘটে (দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই হ্রদ)।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই হ্রদটির উৎপত্তি দক্ষিণ ইয়াভা নেভিরো নদী হতে। উক্ত স্থান হতে আসা স্বল্পমাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কার্বোনেট সমৃদ্ধ “গেলাও” আগ্নেয়গিরির লাভা জমাট হয়ে থাকে। মাত্র তিন মিটার গভীরতা সম্পন্ন এই হ্রদটি বেশ উষ্ণ, যার তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে এবং এই হ্রদটি খনিজ সমৃদ্ধ এবং পার্শ্ববর্তী স্থান জুড়ে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। উচ্চমাত্রার ন্যাট্রন (সোডিয়াম কার্বোনেট ডায়াহাইড্রেট) এবং ট্রোনা (সোডিয়াম সেসিকোকার্টাউটি ডায়াডরেট) এর কারণে এই হ্রদের ক্ষারীয়তার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি যার মাত্রা ১০.৫ হতে ১২ পিএইচ যা সমুদ্রের লবণাক্ততাকেও হার মানায়। এই প্রতিকূল অবস্থায় অ্যালকাপিয়া গ্রামারি, অ্যালকাপিয়া লাতিলাব্রিস, ন্ডালালানী প্রজাতির মাছের বসবাস এই হ্রদে এবং পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ ফ্লামিংগ পাখির প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবেও এই হ্রদটি সুপরিচিত।

এবার আসি এই হ্রদের বেশকিছু অবাক করা তথ্য সম্পর্কে-

এই হ্রদটির কোনো সীমা নাই অর্থাৎ এই হ্রদটির সাথে কোন নদী বা সাগরের সংযোগস্থল নাই যার ফলে বাইরের কোন নদী বা সাগরের পানি এতে মেশে না।

ফ্লামিংগ প্রজাতির পাখিদের এই হ্রদকে নিজেদের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে নির্দিষ্ট করার পিছে রয়েছে আরেক কারণ যা হলো নাট্রন হ্রদের পরিবেশ যথেষ্ট প্রতিকুল আর অন্যান্য শিকারী প্রাণীদের এখানে বেঁচে থাকার অনুপযোগী। যার ফলে ফ্লামিংগরা থাকে নিরাপদ। তাছাড়া উচ্চমাত্রার লবণ এবং তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও এই পানি তারা অনায়াসে পান করতে পারে। ঠিক এ কারণগুলোর জন্যেই এমন একটা স্থানকেই ফ্লামিংগ পাখিদের প্রজননের জন্য বেছে নেয়ার মূল কারণ।

ফ্লামিংগো প্রজাতির পাখি
Source: Smithsonian Magazine

কথিত আছে এই হ্রদটির লবণাক্ততা এতোই তীব্র যার কারণে এর সংস্পর্শে কোন প্রাণী আসামাত্রই পাথরে পরিণত হয়ে যায়। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে ধুসর রঙের ফ্লামিংগ পাখি, বাদুরসহ বেশকিছু প্রাণীর জমে যাওয়া দেহাবশেষ, যা হয়তো পানিতে ভাসছে বা ডালে বসে আছে, হেটে চলছে এ হতে অনেকেই ধারণা করে বসেন এসব প্রাণী যখনই লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে এসেছে তখনই মারা গিয়েছে এবং পাথরে পরিণত হয়ে গিয়েছে। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট ব্যতীত এটা সত্য যে, এসব প্রাণীর মৃত্যু হ্রদের লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে আসা নয় বরং এর কিছু যৌক্তিক কারণ হিসেবে বলা যায়, নাট্রন হ্রদের পিএইচের মাত্রা প্রায় ১০.৫ বা এর কিছু বেশি আর এই পানির সাথে অভ্যস্ত নয় এমন কেউ এর সংস্পর্শে আসা মাত্র চোখ এবং চামড়া মুহূর্তেই ঝলসে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। হ্রদের ক্ষারযুক্ত পদার্থ মূলত সোডিয়াম কার্বোনেট এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ হতে উৎপন্ন হয় যা আসে হ্রদের চারপাশের ঘেরাও করা পাহাড়-পর্বত হতে। সোডিয়াম কার্বোনেট – যা মিশরের মমি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো – এক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে সেসব পশুপাখির মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য যারা অসাবধানতা এবং দুর্ভাগ্যবশত নাট্রন হ্রদে মারা যায়। এই নাট্রন হ্রদের ক্ষারীয়তা বরঞ্চ এটা জীবনদান করে লবণাক্ত জলাভূমি, স্বচ্ছ পানির জলাভূমি, ফ্লামিংগ এবং জলাভূমির পাখিদের প্রজনন ও খাদ্য উৎপন্ন করত: ইকোসিস্টেমের ব্যালেন্স রক্ষার্থে সহায়তা করে।

তবে, ইন্টারনেটে পাওয়া সেসব ধূসর প্রাণীগুলোর কিভাবে কি হলো তাদের?

বিখ্যাত ফটোগ্রাফার Nick Brandt তার “Across the Ravaged Land“ বইয়ের জন্য তোলা বেশকিছু চিত্রকর্ম ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। তার ভাষ্যমতে, ওই এলাকার বিরাজমান জীবন্ত প্রাণীরা অত্র পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তবে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু প্রজাতির পাখি এবং বাদুড়ের মৃতদেহের দেখা পান যা নাট্রন হ্রদের পাড় ধরে ধুয়ে পানির সহিত চলে আসছিলো। কেউই জানতো না আসলে কিভাবে তারা মারা যায়, তবে তার মতে পানির ক্ষারীয়তা এতো বেশি যা তার এক বাক্স কোডেক ফিল্ম রীলের কালি পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে মাত্র ২-৩ সেকেন্ড এর মতো সময় নিবে। তিনি ওইসব প্রাণীদের মৃতদেহ হ্রদের পাড়ে খুঁজে পান এবং তাদের এমন অবস্থানে বসান যেগুলো দেখে মনে হয় এখনো তারা জীবিত আছে আর তাদের স্বস্থানে বিরাজ করছে। সাদাকালো ফিল্টারে ছেঁকে তোলা ছবিগুলো দেখলে আপনারও উৎসুক মনে নানাধরনের প্রশ্নের জন্ম নিবে, আসলেই কি এভাবে ফুটিয়ে তোলা আদৌ সম্ভব?

Across the Ravaged Land“ বই
Source: Nick Brandt: Photography

তার বইয়ে ব্যাপারটাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেন, “Reanimated, Alive Again in Death” শব্দ যুগলের মাধ্যমে।

মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের করাল গ্রাস আজ তাঞ্জানিয়ার নাট্রন হ্রদকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

বর্তমানে কেনিয়া ইয়াসো নাইগ্রো নদীর ধারে হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে পাওয়ার প্লান্ট হতে প্রচুর পরিমাণে নির্গত কেমিক্যালের ফলে নাট্রন হ্রদের লবণাক্ততার ভারসাম্য রক্ষায় মারাত্মক বাধাগ্রস্ত করবে এবং এ কারণে নাট্রন হ্রদ পড়বে হুমকির মুখে।

তাছাড়া অন্যদিকে সোডিয়াম সালফেটের মিশ্রণে তৈরি “সোডা এ্যাশ প্লান্ট” যা তাঞ্জানিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং ইন্ডিয়ার টাটা কেমিক্যাল লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে ওয়াশিং পাউডার তৈরি করবে যা হ্রদের সোডিয়াম কার্বোনেট হতে সংগ্রহ করা হবে এবং প্লান্টটি হ্রদটির কূলেই স্থাপিত হওয়ার অপেক্ষায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই পদক্ষেপ নাট্রন হ্রদের জন্য অন্যতম আরেকটি বিপদের হাতছানি।

সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, এইসব পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নাই যার কারণে নাট্রন হ্রদের জীববৈচিত্রতায় বিপর্যয় ঘটবে। বিশেষত পূর্ব আফ্রিকার ফ্ল্যামিংগ যাদের প্রজনন ক্ষেত্র এই হ্রদটি। এমন বৈরি সিদ্ধান্তের ফলে জীব বৈচিত্র্য অচিরেই বিলুপ্ত হবে।

পৃথিবীর বুকে নাট্রন হ্রদ সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রকৃতির এক স্থান যা তীব্র মাত্রার ক্ষারীয়তা এবং উচ্চ তাপমাত্রার দরুন তার ভূপৃষ্ঠে অভ্যস্ত প্রাণী ব্যতীত অন্য কারও বেঁচে থাকা বেশ দুষ্কর। গভীর লাল এবং আলতো কমলা রঙের পানির মোহে পড়ে উক্ত হ্রদকে অতিথিপরায়ণ মনে করে সাঁতার কাটতে নামলেই মৃত্যু অবধারিত। যার জন্যে নাট্রন হ্রদে সাঁতার কাঁটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জনবসতি নদী-হ্রদের ধারে, বন্ধ্যা-অনুর্বর, পাথুরে ভূমিতে গড়ে উঠার উদাহরণ রয়েছে তবে নাট্রন হ্রদের ইতিহাস পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয়, কেউ কখনো নাট্রন হ্রদের পাড়ে বাস করতে চায় নাই, চাইবেও না।

নাট্রন হ্রদের টিকে থাকাটা পৃথিবীর ইকোব্যালেন্সের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কারণ সাইনোব্যাক্টেরিয়া হ্রদকে কিছু প্রজাতির প্রাণীকে উক্ত স্থানে বসবাসে অভ্যস্ত করে তুলেছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষাধিক ফ্লামিংগ এবং বহু প্রজাতির মাছ যারা স্বচ্ছ পানিতে কখনোই বাঁচতে পারবে না। তাছাড়া, উক্ত হ্রদে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হলে হ্রদের ব্যালেন্সিং নষ্ট হয়ে পড়বে এবং তাঞ্জানিয়ার অনেকেই বর্তমানে সোচ্চার এই হ্রদে নদী হতে স্বচ্ছ পানি সরবরাহের বিপক্ষে। যদি এই হ্রদের লবণাক্ততা কমতে শুরু করে তবে সাইনোব্যাক্টেরিয়ার উৎপাদন কমে যাবে এবং তা বসবাসরত লক্ষাধিক ফ্লামিংগের জীবন বিপন্ন করে তুলবে। পাশাপাশি পাখিদের বসবাস বিনষ্ট করার কুফল ভালো কিছু বয়ে আনবে না পৃথিবীর প্রাত্যহিক নিয়মে। যার ফলাফল, বিশ্ব হারাবে অনিন্দ্য ভয়ংকর সুন্দর এক লবণাক্ত এই আশ্চর্য হ্রদ যার নাম “নাট্রন হ্রদ”।

পৃথিবী বিখ্যাত কিছু মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় বিষয় বোধ হয় মানুষের মন। এই মন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীদের করা কিছু এক্সপেরিমেন্ট তথা পরীক্ষা পাল্টে দিয়েছে মানুষের মন নিয়ে চিরন্তন ধারণা। সেরকমই কিছু পরীক্ষার কথা আজ বলবো।

A Class Divided

যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুল শিক্ষক জেন এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর এই এক্সপেরিমেন্টটি চালান। মার্টিন লুথার কিংয়ের চিন্তাধারা তাকে সবসময় প্রভাবিত করত। ১৯৬৮ সালে যখন মার্টিন লুথার কিংকে খুন করা হয় তারপর থেকেই তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না। তারা আগের মতোই মফস্বল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখেই দেখে যাচ্ছিল।

জেন এলিয়ট তার ক্লাসে

এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইদিনব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসটিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী। প্রথম দিন তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র তথা উঁচু মর্যাদার বলে ধরে নিলেন এবং বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে শুরু করলেন। এমনকি তিনি এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য গ্রুপের শিক্ষার্থীদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করে দিলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের আরও কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে শুরু করলেন।

এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে এখন সুপিরিয়র ভাবে তাদের আচরণ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে মনোযোগী এবং কোন কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করল। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

পরীক্ষা চলছে শিক্ষার্থীদের উপর

পরের দিন এলিয়ট একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে ধরে নিলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।

এই এক্সপেরিমেন্টটি তখনকার সময়ে খুবই আলোচিত হয়। পরীক্ষাটি করার সময়কার ভিডিওগুলো নিয়ে ২৫ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয় যার নাম ‘The Eye of the Storm’। এছাড়া ‘A Class Devided’ নামে আরও একটি ডকুমেন্টারি আছে একই বিষয়ের উপর। এই এক্সপেরিমেন্টটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়।

Asch Conformity Study

এখন যে পরীক্ষার কথা বলব সেটির সারকথা হলো এই যে, সংখ্যাগুরুদের ভ্রান্ত বিশ্বাসও মানব মনের কাছে সঠিক মনে হয় যদিও সে জানে যে তারা ভুল।

ড. সলোমন অ্যাশ ১৯৫১ সালে এই পরীক্ষাটি করেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি একটি কার্ড দেখান যেখানে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তিনটি সরলরেখা আঁকা আছে। এরপর তিনি তাদেরকে আরও একটি কার্ড দেখান যেখানে একটি সরলরেখা আঁকা ছিল। দ্বিতীয় কার্ডের সরলরেখাটির দৈর্ঘ্য পরিস্কারভাবেই প্রথম কার্ডের তিনটির যেকোনো একটির সমান এবং বাকি দুটোর দৈর্ঘ্য হয় এর থেকে বড় না হয় ছোট।

ডানের ছবির তৃতীয় রেখাটি প্রথম ছবির রেখার সমান

এরপর তিনি তাদেরকে খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তা হলো, দ্বিতীয় কার্ডের সরলরেখাটি প্রথম কার্ডের কোন সরলরেখাটির মতো দেখতে? খুবই সোজা একটি প্রশ্ন এবং এখানে ১,০০০ জনকেও এই প্রশ্ন করা হলে ১০০% ক্ষেত্রে সঠিক উত্তরটি পাওয়া উচিত।

মজার ব্যাপার হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের একটি গ্রুপের মধ্যে মাত্র একজন বাদে বাকি সবাই ছিলেন ড. সলোমনের নিজের লোক।তাদেরকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল ভুল উত্তর দিতে। সবশেষে যখন প্রকৃত অংশগ্রহণকারীকে একই প্রশ্ন করা হল তখন দেখা গেল সেই একজন বাকি সবার উত্তরে বিভ্রান্ত হয়ে গেল।

ড. সলোমনের পরীক্ষা

যদিও সে খুব পরিস্কার ভাবেই জানে যে কোন সরলরেখাটি সবচেয়ে বড়, তবুও সে অন্যদের ভুল উত্তরগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুল উত্তর দিল। এই এক্সপেরিমেন্ট এটাই প্রমাণ করে, মানুষ সবসময় চায় অন্য সবার মতো হতে যদিও সে আসলে তাদের চেয়ে উৎকৃষ্ট কেউ হতে পারত।

Kitty Genovese Case

১৯৬৪ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে নিজ অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কিটি জেনোভেস নামের এক নারীকে প্রকাশ্যে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। সেটি ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি।

কিটি জেনোভেস (সাদাকালো থেকে রঙিন করা ছবি)

কেন সেটি এত আলোচিত? কারণ The New York Times দাবি করেছিল যে, ওই সময়ে ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিল প্রায় ৩৭-৩৮ জনের মতো, যাদের কেউ ওই নারীকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপর থেকেই এই ঘটনা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়। কেন সাধারণত জনাকীর্ণ একটি জায়গায় কেউ বিপদে পড়লে আশেপাশের কেউ সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে না? এর উত্তর বুঝতে হলে দুটি বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে। ‘Diffusion of Responsibility’ এবং ‘Bystander Effect’।

‘Diffusion of Responsibility’ এবং ‘Bystander Effect’ কীভাবে কাজ করে মানুষের মধ্যে

এমন ক্ষেত্রে সবাই ভাবে, অন্য সবাই তো আছে সাহায্য করার জন্য, আমি কেন ঝামেলায় জড়াবো নিজেকে? পরবর্তীতে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তুমি যত বেশি মানুষের সামনে বিপদে পড়বে তোমার সাহায্য পাবার সম্ভাবনা তত কম। কারণ তখন সবার মধ্যে কাজ করে Diffusion of Responsibility এবং Bystander Effect। আমরা একটু চারপাশে তাকালেই এই নির্মম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পারব। এরকম ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহই ঘটছে। American Psychologist পরবর্তীতে একটি গবেষণা প্রকাশ করে Kitty Genovese Case এর মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলো নিয়ে।

Violinist at the Metro Experiment

জশুয়া বেল (Joshua Bell) একজন গ্র্যামিজয়ী ভায়োলিনবাদক। ভায়োলিনে তার বেশ কিছু বিখ্যাত সৃষ্টি আছে। তার রচিত একটি Piece (স্বরলিপি) আছে যেটিকে ধরা হয় পৃথিবীর সবথেকে জটিল এবং অপূর্ব সৃষ্টিগুলোর একটি।

জশুয়া বেল

এই এক্সপেরিমেন্টটি করার তিনদিন আগে তিনি বোস্টনের একটি থিয়েটারে বাজিয়েছিলেন, যেখানে তার ভায়োলিনের বাজনা শোনার জন্য প্রতি শ্রোতাকে সিটপ্রতি গুণতে হয়েছিল ১০০ ডলারের মতো করে।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও ওয়াশিংটন ডিসির L’Enfant Plaza মেট্রো সাবওয়ে স্টেশনে ছিল অনেক ভিড়। আর তারই মধ্যে মেট্রোর প্রবেশপথে মাথায় একটি বেজবল ক্যাপ পরে জশুয়া বেল বাজাচ্ছিলেন ভায়োলিন যা শোনার জন্য শিল্পপ্রেমীরা ১০০ ডলার খরচ করতেও পিছপা হয় না। তিনি ৪৫ মিনিটের মতো বাজিয়েছিলেন। পুরো ঘটনাটি একটি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে ১,০৯৭ জন লোক তার সামনে দিয়ে চলে গিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ৭ জন কিছুক্ষণের জন্য থেমেছিল তার ভায়োলিন বাজানো শুনতে এবং কেবলমাত্র একজন তাকে চিনতে পেরেছিল।

জশুয়া বেল বাজাচ্ছেন সাবওয়েতে

সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপারটি কী জানেন? এই ৪৫ মিনিটের পারফরমেন্স দিয়ে তিনি পথচারীদের কাছ থেকে আয় করতে পেরেছিলেন মাত্র ৩২.১৭ ডলার। মজার ব্যাপার হল, যে ভায়োলিনটি তিনি বাজিয়েছিলেন তার মূল্যই ছিল ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার!

এই এক্সপেরিমেন্টটি করেন The Washington Post এর Gene Weingarten নামের একজন কলামিস্ট। ২০০৮ সালে তিনি পুলিৎজার পুরষ্কার পান এই সংক্রান্ত একটি ফিচার লিখে। এই পরীক্ষাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে সাধারণ মানুষ তার চারপাশে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে কত কম গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে।

Fantz’s Looking Chamber

একটি সদ্যোজাত শিশুর মন কীভাবে কাজ করে? তারা কীভাবে চিন্তা করে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে Robert L. Fantz ১৯৬১ সালে খুবই সহজ কিন্তু যুগান্তকারী একটি পরীক্ষা করেন সদ্যোজাত শিশুদের নিয়ে।

তিনি একটি বোর্ডে ৪টি ছবি সংযুক্ত করেন। যেগুলো এক-একটি প্যাটার্ন নির্দেশ করে। সেগুলো ছিলো Bulls-Eye(শুটিং এর জন্য ব্যবহৃত টার্গেট), প্রিন্ট করা সাদা-কালো কিছু লেখা, একটি প্যাটার্ন যেটি দেখতে দুটি চোখের মতো এবং মানুষের মুখাবয়বের একটি স্কেচ। তারপর তিনি এগুলোকে সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে দেন যাতে নিচে শুয়ে থাকা শিশুটি সহজেই এই ছবিগুলো দেখতে পারে।

শিশুটিকে নিচে শুইয়ে দিয়ে পরীক্ষক এভাবেই দেখেন সে কোন ছবির দিকে তাকাচ্ছে

এরপর তিনি লক্ষ্য করতে লাগলেন কোন ছবিটি শিশুটিকে বেশি আকৃষ্ট করে। তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে ছবিগুলো শিশুরা সাধারণত কম দেখে সেগুলোই তাদের আকৃষ্ট করবে সবচেয়ে বেশি। যেমন- Bulls-Eye।

কিন্তু বিস্ময় নিয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন, শিশুটি অন্য সব ছবিগুলো থেকে মানুষের স্কেচটির দিকে অনেক বেশিক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। যাদের সে সবসময়ই দেখে। পরবর্তীতে তিনি বলেন যে, শিশুরা মানুষের অবয়ব বুঝতে পারার ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়। যারা তার দেখাশোনা করবে সেই মানুষের মতো দেখতে কোনো কিছুতেই তারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাবে।

শিশুরা কেমন ছবির দিকে বেশি তাকায় তার পরিসংখ্যান

একটি মানবশিশু যেখান থেকে যেভাবে চিন্তা করে সেখান থেকেই হয়তো সব রহস্যের শুরু। পরিণত বয়সের মানুষের চিন্তা-ভাবনা এত সরল নয়, আমরা সব সময় যৌক্তিক কাজগুলো করি না।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ এমন সব সিদ্ধান্ত নেয় যেগুলো মনে হতে পারে অকল্পনীয়। এই মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলো আমাদেরকে নিজেদের নিয়েই নতুন করে ভাবতে শেখায়।

তথ্যসূত্র

onlinepsychologydegree.info
en.wikipedia.org
apa.org
washingtonpost.com